বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » দুর্নীতির মামলায় জামিন না দেওয়ায় জজকে স্ট্যান্ড রিলিজ
দুর্নীতির মামলায় জামিন না দেওয়ায় জজকে স্ট্যান্ড রিলিজ
বিবিসি২৪নিউজ,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্যকে জামিন না দেওয়ায় জজকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া বলেন,একেএমএ আউয়ালের জামিনের সময় জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান অত্যন্ত অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেছেন।
একইসঙ্গে এ ঘটনায় লোকজন রাস্তায় নামে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজ এবং পরে আউয়ালকে স্ত্রীসহ জামিন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার (০৪ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, পিরোজপুর জেলা জজের কাছে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার স্ত্রী দুর্নীতির মামলার জন্য জামিন চাইতে গিয়েছিলেন। জামিন চাওয়ার সময় তার আইনজীবী এমনকি অন্য সব আইনজীবীর সঙ্গে অত্যন্ত অশালীন এবং রূঢ় ব্যবহার করেন জেলা ও দায়রা জজ। আমরা গতকাল থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
আইনমন্ত্রী বলেন, সেই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এমন একটা অবস্থা দাঁড়ায়, যেখানে বারের সবাই আদালত বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি রাস্তায় গণ্ডগোল চলছিল। রাস্তায় লোকজন বেরিয়ে গিয়েছিল। সেটাকে কন্ট্রোল করার জন্য তাকে সেখান থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে আদেশ দেওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে।
মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক আব্দুল মান্নান।
এর প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। শহরের দোকান-পাটসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে।
এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ এবং পিরোজপুরের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাছরিনকে ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নাহিদ নাছরিন এ দায়িত্ব পাওয়ার পর আউয়ালের পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন পুনরায় আউয়াল দম্পতির জামিন পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনই নিজের ক্ষমতাবলে আউয়াল দম্পতিকে জামিন দেন নাহিদ নাছরিন।
গত ৩০ ডিসেম্বর আউয়াল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তিনটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেসব মামলার জামিনে মঙ্গলবার দুপুরে তারা আবেদন করেন পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে।
আইনমন্ত্রী বলেন, জামিন দেওয়া না দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের। কিন্তু আদালত যদি এমন কোনো ব্যবহার করেন, এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং আইনের শাসন রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে কি-না, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন কিন্তু একটা ব্যবস্থা নিতে হয়।
‘সেই অবস্থার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অদ্ভুত পরিস্থিতির জন্যই, সম্পূর্ণ সিচুয়েশনটাকে প্রশমিত করার জন্য পিরোজপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার স্ত্রীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি না, এখানে আইনের শাসনের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে।’
বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন আপনার (আইনমন্ত্রী) পদত্যাগ দাবি করেছেন- এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন, প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী বলেন, উনি তো অনেক কিছু চাইতে পারেন।
‘কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে তথ্যাদি না জেনে আমাকে দোষারোপ করাটা তিনি অন্যায় করেছেন। এটুকু আমি বলতে পারি। এর থেকে বাড়লে আমি ব্যবস্থা নেব।’
দুদকের আইনজীবীরা দাবি করছেন, এ ধরনের ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটেনি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, দুদকের আইনজীবীরা এ পরিস্থিতির সম্মুখীন আগে হয়েছেন কি-না, সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আমি দুদকের আইনজীবী ছিলাম।
মামলার মেরিট নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও আইনমন্ত্রী বলেন, মামলায় শুধু এফআইআর হয়েছে। মামলায় এখনও চার্জশিট হয়নি। তাকে হাইকোর্ট এন্টিসিপেটরি জামিন দিয়েছিলেন। সেটা আবার আপিলেট ডিভিশন খারিজ করে দিয়েছিলেন।
‘মামলার বেইল আর নো বেইল- এটার মেরিট নিয়ে আমি আলাপ-আলোচনা করতে চাই না। আমি শুধু বলছি, কালকে যদি এই ব্যক্তি (জজ) বারের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন, সেটা না করতেন, তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি হতো না।’
এ পরিস্থিতি আইনজীবীরা তৈরি করেছিলেন কি-না- প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি এ ব্যাপারে এর থেকে বেশি বলতে চাই না। এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকতে চাই। যতক্ষণ না তথ্যাদির সবকিছু আমার সামনে আসে।
এ ঘটনার তদন্ত হবে কি-না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় তদন্ত করা হবে।
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিত হচ্ছে। এটা আপনারা দেখছেন। বিচার হচ্ছে এটা আপনারা দেখছেন। কিন্তু এটা দেখেননি। অদ্ভুত পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা নিতে হয়, সেটা আমাকে নিতেই হবে।
সরকারি দলের লোক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে কি-না, প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, এখানে সরকারি দলের লোক বা অপজিশনের লোক কনসিডর করা হয়নি।
‘আমি বারবার বলছি, ব্যবহারটা ঠিক করে করা হয়নি। আমি তো দোষী সাব্যস্ত করিনি। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।’আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন,একটা বিরাট অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচানো হয়েছে।