শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু » দিল্লিতে শাহীনবাগের আন্দোলন আর কতদিন চলবে?
দিল্লিতে শাহীনবাগের আন্দোলন আর কতদিন চলবে?
বিবিসি২৪নিউজ,দিল্লি প্রতিনিধি:ভারতে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে দিল্লির যে শাহীনবাগ, তা আর কতদিন বর্তমান আকারে অব্যাহত থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীরা এদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলেও সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তাদের এটাও ভাবতে হবে যে তারা আর কতদিন অন্য নাগরিকদের যাতায়াতের অসুবিধা ঘটাবেন।
তবে গত দুমাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবাদ চালিয়ে আসা শাহীন বাগের বিক্ষোভকারীরা অবশ্য বিবিসিকে বলছেন, রাস্তা আটকে রাখার জন্য মূলত দিল্লি পুলিশই দায়ী - আর বিতর্কিত ওই আইন প্রত্যাহার না করা অবধি তাদের আন্দোলন চলবে।
কিন্তু শাহীনবাগের সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো এখন কী হতে পারে?
গত ১৫ই ডিসেম্বর, রবিবারের এক বিকেলে দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির শাহীনবাগে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন নানা বয়সের মুসলিম নারী-পুরুষ।
কালক্রমে সেটাই গোটা ভারতে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আইকনে পরিণত হয়েছে, পাশাপাশি রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আটকে রেখে এই প্রতিবাদ কতটা সঙ্গত সেই প্রশ্নও উঠেছে।
গতকাল বুধবারের পর এদিন বিকেলেও শাহীনবাগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিলিত হন এবং দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেন।
অন্যতম মধ্যস্থতাকারী আইনজীবী সাধনা রামচন্দ্রন সেখানে গিয়ে মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন, “রাস্তা আটকে রাখার এই বিষয়টি কীভাবে ফয়সালা করা যায় সেটা দেখতেই সুপ্রিম কোর্ট আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন, আপনাদের বক্তব্য শুনতে বলেছে।”
তবে সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “আমরা কেউই চাই না শাহীনবাগের অবসান ঘটুক - বরং আমরা চাইব এই আন্দোলন জারি থাকুক।আরেক মধ্যস্থতাকারী সঞ্জয় হেগড়েও বলেন, “দুমাসের ওপর আপনারা বসে আছেন - আপনাদের কী অসুবিধা হচ্ছে সেটা আমরা শুনছি। অন্যদের কী ভোগান্তি হচ্ছে সেটাও শুনেছি।”
“এই দেশে আমরা পাশাপাশি থাকছি পরস্পরের অসুবিধা ঘটানোর জন্য নয়, বরং একে অন্যকে সাহায্য করার জন্য।”
সুপ্রিম কোর্টের এই দূতরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা শুধু অবরুদ্ধ রাস্তা খোলার বিষয়টিরই মীমাংসা করতে চান।
নাগরিকত্ব আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে যে মামলা হয়েছে, শীর্ষ আদালতে তার আলাদা শুনানি হবে - সেটাও তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
শাহীনবাগে প্রথম দিন থেকে যুক্ত নার্গিস আক্তার কিন্তু বিবিসিকে বলছিলেন, “দুটোকে আলাদা করে দেখা কঠিন - কারণ বিজেপি প্রথম দিন থেকে একে মিনি পাকিস্তান বলে প্রচার করেছে, সাম্প্রদায়িক ঘৃণার রঙে চুবিয়ে দিল্লির নির্বাচনে প্রচার করেছে।” “কিন্তু সারা ভারত তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, এবং যতদিন না এই ধরনের বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ হবে ততদিন জনমানুষের এই প্রতিবাদ কিন্তু চলবেই।”
আর এক প্রতিবাদকারী ফতিমা আবার বলছিলেন, “আমরা তো বড়জোর দেড়শো মিটার রাস্তা আটকে রেখেছি।”
“ওদিকে দিল্লি পুলিশ নিজেরাই তো আশেপাশের তিন-চারটে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে, যে কারণে জ্যাম হচ্ছে - মানুষের অসুবিধা হচ্ছে।”
“আর সরকার আইনটা তুলে নিলেই তো পারে, আধঘন্টায় এই আন্দোলন খতম হয়ে যাবে।”
তবে বাস্তবতা হল, এতদিন ধরে আন্দোলনে গতি ধরে রাখাও শাহীনবাগের জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ছে - তার ওপর রাস্তা আটকে রাখার বিষয়টিও দিল্লির জনমতকে প্রভাবিত করছে।শাহীনবাগ আন্দোলনের মুখ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম অবশ্য বলছিলেন, “অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশের গাড়ি-স্কুলবাস-মোটরসাইকেল সবই তো এ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বাহানা মাত্র।”
“আমাদের দাবি মেনে নাও, কে আর ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় এসে দিনের পর দিন বসে থাকতে চায় বলুন তো?”
এই পরিস্থিতিতে শাহীনবাগের বিক্ষোভকারীরা যাতে মূল রাস্তা ছেড়ে দিয়ে ওই এলাকারই কোনও পার্কে বা মাঠে সরে যান, সুপ্রিম কোর্টের দূতরা সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।আন্দোলনে কিছুটা ক্লান্তির ছোঁয়া লাগা শাহীনবাগ সেটা মেনে নেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।