মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম | সাবলিড » কচুরিপানা খেতে হবে কেন, দেশে কী দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে- রওশন এরশাদ
কচুরিপানা খেতে হবে কেন, দেশে কী দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে- রওশন এরশাদ
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, কাগজে দেখলাম আমাদের পরিকল্পণা মন্ত্রী কচুরিপানা খেতে বলেছেন। কচুরিপানা খেতে হবে কেন, আমাদের দেশে কী দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে? গরুর খাদ্য মানুষ খেতে পারে না, মানুষের খাবার গরু খেতে পারে? ঘাসের মধ্যে তো অনেক ভিটামিন আছে, তবে আমরা ঘাস খাই না কেন?মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সম্ভাবনার দেশ হিসেবে সাড়া দুনিয়া এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে সমস্যা, সংকট তথা চ্যালেঞ্জ কম নয় আমাদের সামনে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, এক দশক ধরে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশে বৈষম্য সূচক বেড়েছে। ধনী, গরীবের মধ্যে যে বৈষম্য, এটা দূর করা দরকার, তা না হলে কাঙ্খিত দারিদ্র বিমোচন সম্ভব নয়।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নারী ক্ষমতায়ন কোথায়? তার এই প্রশ্নে সংসদে উপস্থিত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেসে ফেলেন এবং আঙুলের ইশারায় স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি ইঙ্গিত করেন। এ সময় সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তারপরও বিরোধী দলীয় নেতা তার বক্তব্যে দৃঢ় থাকেন।
তিনি বলেন, ভাগ্যচক্রে আমাদের ক্ষমতায়ন হয়েছেন। দেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে ভাগ্যচক্রে। এখনো দেশে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, নারী শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাহলে কোথায় নারীর ক্ষমতায়ন? এ সময় তিনি নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানান তিনি। এই সংসদে এখনো নারী সদস্য অনেক কম।
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধির এই ঊর্দ্বমুখী হারের সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু চলকের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী হার, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের স্থবিরতা, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী হার, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের ঝুঁকিজনিত নতুন হুমকি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্থবিরতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী হারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দুই ধাপ পিছিয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের মতে বাংলাদেশের ৫০ ভাগের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। এক দশক ধরে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশে বৈষম্য সূচক বেড়েছে। এর অর্থ হলো-সমাজের ধনী শ্রেণির লোকেরা বেশি উপকৃত হয়েছে আর মধ্যবিত্ত ও গরীবশ্রেণির লোকেরা আরও বেশি গরিব হচ্ছে।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, প্রবাসী আয়ের সুবাতাস ছাড়া দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতইে কিছুটা অস্বস্তিকর। আমাদের অভ্যন্তরীণ আহরণে অনেক বড় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সরকারকে এ জন্য ব্যাংক থেকে অধিক পরিমাণে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে তারল্য সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আমাদের রপ্তানি কমে যাচ্ছে, রেমিট্যান্স আহরণ ভালো হলেও তা দিয়ে পুরোপুরি চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতে আমাদের খেলাপি ঋণ বাড়তে বাড়তে তা বিতরণকৃত ঋণের ১২ শতাংশে ঠেকেছে। সবকিছু নিয়ে গত বছর অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যেই ছিল।
মুদ্রাস্ফীতির সমালোচনা করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, মূল্যস্ফীতির হার নির্ভর করে মূলত জিনিসপত্রের দামের ওপর। যদি দাম বেড়ে যায় তবে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যায়। সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, ডাল, পিয়াজ ও শিশু খাদ্যের দাম ৫ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির থাবা থেকে দরিদ্র মানুষকে সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বেকার সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, দেশে তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার। শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এসব তরুণের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা কী করেছি? প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকেরা আয়ের অংশ পাচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বৈষম্য। আমাদের দেশে শ্রমিকদের অধিকার আজও সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। এখনও ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি। সরকার সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে সম্পূর্ণ বিনাখরচে নারীকর্মী প্রেরণের কথা বলেছেন, আমি সৌদি আরবে গিয়ে তাদের দুর্দশার কথা শুনেছি। তারা অনেক টাকা খরচ করে সেখানে যাচ্ছে এবং দুর্দশায় পড়ছে। এসব দেখার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে কোথায় গলদ ধরতে হবে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। আমরা দেখেছি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনগুলোর সমন্বয়হীনতা, অকার্যকর ওষুধ কেনা, সঠিক পরিকল্পনা না থাকা এবং কীটনাশক ক্রয়ে সরকারের নীতিমালা অনুসৃত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুতের ভেলকিবাজি কিছুটা কম থাকলেও ভয়াবহ অবস্থা গ্রামে-গঞ্জে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন হিসেবে পরিচিত এলাকায় এই লোডশেডিং সবচেয়ে বেশি।