মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম | সাবলিড » চীন থেকে ফিরতে হবে নিজ দায়িত্বে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীন থেকে ফিরতে হবে নিজ দায়িত্বে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক:নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে বাংলাদেশি কাউকে এই মুহূর্তে সরকারিভাবে দেশে ফেরানো হচ্ছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ব্যক্তিগত খরচে কেউ ফিরলে পরবর্তী ব্যবস্থা সরকার নেবে।আজ ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রশ্ন হচ্ছে আমরা প্লেন পাঠিয়ে ওদের আনব কি-না, জনগণের টাকা খরচ করে ওদেরকে আনব কি-না। আমরা খুব সংবেদনশীল, তাদের বাবা-মা অনেকে বলছেন তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য। আমরা তাদেরকে বলেছি, আপনারা যদি নিয়ে আসেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তারা আসলে আসতে পারে।
“কিন্তু যে জিনিসটি, আগে আমরা যাদের এনেছি, তিন কোটি টাকা আমার প্লেন ভাড়া দিতে হয়েছে, আমার ফান্ডে আর কোনো পয়সা নাই। সরকার দেবে অবশ্যই। যে জিনিসটি হচ্ছে, তারা আসতে পারে চাইলে।করোনাভাইরাস চীনের যে নগরী থেকে ছড়িয়েছিল সেই উহান থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ৩১২ বাংলাদেশিকে বিমানের একটি উড়োজাহাজ গিয়ে দেশে ফেরত আনে। কিন্তু তারপর ওই পাইলটদের অন্য দেশ ঢুকতে দিতে না চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিমান।
এই পরিস্থিতিতে অন্য কোনো পাইলটকে আর চীনে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে পারছেন না বাংলাদেশ। চীনা কোনো বিমান পরিবহন সংস্থার উড়োজাহাজ ভাড়া করে উহানে আটকে থাকা আরও ১৭১ বাংলাদেশিকে আনার কথা বলা হলেও তাতে চীনা কর্তৃপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। উহানের পাশের শহর ইচাংয়েও আটকে আছেন ১৭২ জন, তারাও দেশে ফিরতে আগ্রহী।
যেসব বাবা-মা যোগাযোগ করেছেন, তাদের সন্তানদের নিজ উদ্যোগে দেশে ফেরানোর কথা বলা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা বলেছি আপনারা যদি আনতে চান… দেখেন আমরা এখনো ফ্লাইট ক্যানসেল করিনি। বিশেষ করে কুনিমং এবং গুয়াংজু থেকে চায়নিজ ফ্লাইট আসছে।
উহান থেকে প্রথম দফায় ফেরা বাংলাদেশিদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা না গেলেও সতর্কতার অংশ হিসেবে তাদের ১৪ দিন আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদের বেশিরভাগ রয়েছেন আশকোনার হজক্যাম্পে, বাকিরা হাসপাতালে।
চীনে আটকে থাকা বাকিদের ফেরানোর ক্ষেত্রে টাকাই একমাত্র সঙ্কট কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “নট নেসেসারিলি। এরা যদি হজ্জক্যাম্প থেকে বের না হয়, বাকিদের কোথায় রাখব?
“আমরা বলেছি, তোমরা যদি আসতে চাও, ডেফিনিটলি আমরা চেক করে, কোয়ারেন্টিনে পৌঁছায়ে দেব।কোয়ারেন্টিনে রাখার ক্ষেত্রেও জটিলতা হচ্ছে জানিয়ে মোমেন বলেন, “আমাদের দেশ খুব ঘনবসতিপূর্ণ, আমাদের কোয়ারেন্টিনেও কিছু সমস্যা হয়। কারণ মা, বাবা, আত্মীয়স্বজন, আশেপাশের লোক দেখা করতে চলে যায়। কোয়ারেন্টিনের লোক কেউ নামাজ পড়তে গেলেতো আমরা তাকে আটকাতে পারি না। নামাজে গেলে স্পর্শ থেকেও সেটা ছড়াতে পারে।
নভেল করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে আপাতত নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্য বিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ার পর গত ছয় সপ্তাহে ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
নতুন করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ২৫ দেশে। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী এক বাংলাদেশির শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ায় গত রোববার তাকে নেওয়া হয়েছে আইসোলেশন ইউনিটে। তবে বাংলাদেশে কারও মধ্যে অথবা চীনে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশির মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমণের খবর আসেনি এখনও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “খুব কম দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর- এরকম কয়েকটি দেশ তাদের লোকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। বাকি শত শত দেশের লোকেরা তাদের ওখানে আছে। চায়নিজরা ওদেরকে সাবধান করে দিয়েছে এবং দে আর টেকিং কেয়ার অব ইট।
“আমাদের ছেলেমেয়ে যারা আছে, তারা অভিযোগ করেছে, তাদের নাকি খাবার দেওয়া হয় না। কিন্তু আমরা তথ্য নেওয়ার পর দেখেছি, চায়নিজরা বলেছে তাদেরকে পানি দেয়, খাবার দেয়, যথাসময়ে পৌঁছে দেয়। দুজন চায়নিজ সিনিয়র অফিসিয়াল নিয়োগ করেছে তাদের দেখভাল করার জন্য। ওখানে তারা মোটামুটি ভালো আছে।
সৌদি আরব ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় বলে সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সে বিষয়ে কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে জানান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সৌদি আরব আমাদের বলেনি কখনো এবং বলার কারণও নাই। রোহিঙ্গা হলে তাদেরকে তাদের দেশে পাঠাবে, আমাদের এখানে কেন? এগুলো মাঝেমধ্যে পত্রিকা চমক দেয় আর কি। এটাও একটা চমক।