মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় কেন সৌদি আরব?
৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় কেন সৌদি আরব?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি: সৌদি সরকার বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যে তাগিদ দিচ্ছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ কী অবস্থান নেবে তা এখনও ঠিক করতে পারেনি সরকার।বলা হচ্ছে, সৌদি আরবে হাজার হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে যারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেখানে গেছে, এবং কাজের মেয়াদ শেষ হবার পর অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তাদেরকেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় সৌদি আরব।
কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ নিতে চায় না। কিন্তু সেটা করতে গেলে যদি বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে - সে কথা ভেবে সরকার সুনির্দিষ্ট কোন অবস্থান তুলে ধরতে পারছে না।
কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ কমিশনের দু’দিনব্যাপী বৈঠকে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে আলোচনায় আনা হতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বিবিসিকে বলেছেন, অন্য কোনো দেশ যদি তাদের দেশে থাকা রোহিঙ্গাদের কাউকে ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।
অবশ্য একইসাথে মি: মোমেন বলেছেন, এ নিয়ে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
তবে কূটনৈতিক সুত্রগুলো বলছে, সৌদি সরকার বাংলাদেশের পার্সপোর্টধারী ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করে তাদের ফেরত নেয়ার তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশকে চিঠিও দিয়েছে। এমন তাগিদ দেয়ার ক্ষেত্রে সৌদি সরকার এই রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়টি’ উল্লেখ করেছে বলে সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯০-এর দশকের শেষে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গিয়েছিল। তাদের একটি বড় অংশকে সৌদি সরকার শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।
কিন্তু ২০১৪ সালে এবং তার পরে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে যে রোহিঙ্গারা সেখানে গেছে এবং সেখানে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, তাদের নিয়েই তোলা হয়েছে প্রশ্ন ।
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলছিলেন, দুই দেশের যৌথ কমিশনের বৈঠকে সৌদি আরব যদি বিষয়টা উত্থাপন করে, তখনই বিস্তারিত জেনে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তুলে ধরবে।
“বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট বা কাজের মেয়াদ শেষ হলে তারা বিভিন্ন সময় জানায়। তখন যাচাই-বাছাই করা হয়। আর বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। আমার মনে হয় না, এনিয়ে কোনো সমস্যা হবে। দুই দেশে সম্পর্ক এখন খুবই ভাল। ফলে কোনো সমস্যা আমরা দেখি না।”
“যৌথ কমিশনের বৈঠকে এই বিষয় যদি তারা উত্থাপন করে, সেইভাবে আমরা অবস্থান তুলে ধরবো” - বলেন মি. মসিহ।
কূটনেতিক অন্য সূত্রগুলো বলছে, সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল অবস্থায় রয়েছে এবং বাংলাদেশ তা ধরে রাখতে চাইছে।
তা ছাড়া সৌদি আরবে এখন ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এই দু’টো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সৌদি আরবের সাথে কঠোর কোনো অবস্থান নিতে চাইছে না।
রোহিঙ্গারা যে পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেছে তা আসলে সঠিক কিনা, এবং এসব যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে - বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে সৌদি আরবের কাছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন শিউলী শর্মা। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলেই তারা মনে করেন।
“রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিতে না পারে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর হওয়া উচিত।”
টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মোহাম্মদ নূর বলছিলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে তাদের কারও পক্ষে বিদেশ যাওয়া অনেক কঠিন বলে তারা মনে করেন।
এরপরও কেউ গিয়ে থাকলে সেটা বাংলাদেশ এবং সৌদি সরকার খতিয়ে দেখবে, বলেন তিনি।