অ্যাসিড হামলায় শীর্ষে কলকাতা
বিবিসি২৪নিউজ,কলকাতা প্রতিনিধি: উত্তরপ্রদেশকে পিছনে ফেলে অ্যাসিড হামলায় ফের শীর্ষে বাংলা৷ অ্যাসিড হামলা কমাতে সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন নির্দেশ জারির পরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি৷একদিকে, অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী লক্ষ্মী আগরওয়ালের বায়োপিক তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে ভারতের দুটি রাজ্যে অ্যাসিড হামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে৷সম্প্রতি বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘ছপাক’৷ ঠিক তার আগের দিন কেন্দ্রের রিপোর্টে দেখা গেল, যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশকে পিছনে ফেলে এ বার অ্যাসিড হামলায় শীর্ষে পৌঁছেছে বাংলা৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পরে এ বার রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩৷ অ্যাসিড হামলার মোট ঘটনা ঘটেছে ৫০টি৷ ২০১৬ সালে রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আরো বেশি৷ সেবার ৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ ২০১৭ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমে যায়৷ সেই বছর সংখ্যা ছিল ৫৪৷
উত্তরপ্রদেশ বাংলাকে টপকে এগিয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু, এক বছরের মাথায় ফের শীর্ষে প্রগতিশীল বলে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ৷ সংখ্যা কমলেও যোগীর রাজ্য থেকে হামলার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে এই রাজ্য৷
এ ক্ষেত্রে অ্যাসিড আক্রমণের চেষ্টা হিসেবের মধ্যে রাখা হয়নি৷ এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আক্রমণের ১২টি চেষ্টা হয়েছে৷ এ ছাড়া, অনেক ঘটনা আছে যা পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয় না বা কেউ অভিযোগ দায়ের করে না৷ ফলে আক্রমণের চেষ্টা যতটা হয়, তার সবটা পরিসংখ্যানে উঠে আসে না৷
সিনেমার রুপোলি পর্দায় যা দেখানো যায়, বাস্তব তার থেকে রূঢ় হয়ে থাকে৷ তাই ভারতের শীর্ষ আদালতের কঠোর নির্দেশ থাকলেও অ্যাসিড আক্রমণের প্রবণতা সমাজে রয়েই গিয়েছে৷ অ্যাসিড বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও তার কেনাবেচা সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি৷ ফলে অ্যাসিড চাইলেই বাজারে মিলছে৷
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপরাধ নিষ্পত্তির বিষয়টি৷ অ্যাসিড হামলা সংক্রান্ত মামলার প্রায় ৯৪ শতাংশ বিচারাধীন রয়েছে৷ এর ফলে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে, অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে৷ ‘ছপাক’ সিনেমার পরিচালক মেঘনা গুলজার ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানি নিয়ে যতটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে, সে তুলনায় অ্যাসিড হামলা নিয়ে বিশেষ সচেতনতা তৈরি হয়নি৷ এটাও একইরকমভাবে একটা জঘন্য অপরাধ৷’’
মানুষের ওপর অ্যাসিড ছোড়ার অপরাধ করলেও বিচার অনেক ক্ষেত্রে অধরা থেকে যাচ্ছে৷ যার উদাহরণ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা পারমিতা বেরা৷ এই তরুণী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হন৷ এখন পর্যন্ত ১৫ বার তাঁর প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছে৷
এই নারকীয় হামলার মুখে পড়েও শিরদাঁড়া টানটান করে লড়াই করছেন পারমিতা৷ তিনি তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কিন্তু বিচার পাননি৷ পারমিতা বলেন, ‘‘একটি ছেলে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল৷ আমি তাতে রাজি হয়নি, তাই সে অ্যাসিড ছোঁড়ে৷ দুঃখের বিষয়, এখনো তার সাজা হয়নি৷’’
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অনুপম গোলাস প্লাস্টিক সার্জারি করছেন৷ তিনিও পারমিতার লড়াইয়ে মুগ্ধ৷ তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে শুধু চেহারা নয়, মনের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে৷ পারমিতার লড়াইয়ে সমাজ অনেক ক্ষেত্রে ওর পাশে দাঁড়ায়নি৷ সেটা শরীর ও মনের লড়াইকে আরও প্রতিকূল করে তোলে৷’’
পারমিতার মতো এমনই লড়াই চালাচ্ছেন অনেক তরুণী৷ শুধু একটি বলিউডি সিনেমা মানসিকতার বদল ঘটাতে পারবে না, এমনই মত দমদমের অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী সঞ্চয়িতা যাদবের৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকার এগিয়ে না এলে পরিস্থিতি বদলাবে না৷ অ্যাসিড আক্রমণের পর বিচার পাওয়া দূরের কথা, আক্রান্তকে ভয় দেখাচ্ছে অভিযুক্ত৷ আমাদের কর্মসংস্থানের দিকটিও সরকারকে দেখতে হবে৷’’
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা দেবনাথের বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এখন উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে৷ এখানে মুখ্যমন্ত্রী নারী, আবার এখানেই নারীদের উপর নিয়মিত অত্যাচার চলছে৷ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে শাসক দলের মদতে৷ অপরাধ করলে তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ পুলিশ-প্রশাসন পাশে না থাকলে অপরাধীরা সাহস পাবে৷’’
ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘একটি মেয়ের জীবনের মূল্য তিন লক্ষ টাকা নয়৷ এই হামলা বন্ধ করতে হবে৷ এটা সরকারকেই করতে হবে৷ সব বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় নামছেন, কিন্তু ধর্ষণ থেকে অ্যাসিড হামলা নিয়ে তিনি নীরব কেন?’’