শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » ব্রাহ্মণবাড়িয়া আহমদীয়া মসজিদ ঘিরে এত উত্তেজনা কেন?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আহমদীয়া মসজিদ ঘিরে এত উত্তেজনা কেন?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি:বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ দখলের হুমকির আসার পর শুক্রবারের নামাজের আগে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।মসজিদটি ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়।
আহমদীয়া মুসলিম জামাত বলছে, স্থানীয় দু’টি কওমী মাদাসার পক্ষ থেকে ‘তাহাফুজে খতমে নবুয়ত’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জুম্মার নামাজের পর জমায়েত ডাকা হয়েছিল।
তারা আহমদীয় মুসলিমদের মসজিদটি দখলের হুমকি দিলেও পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থার কারণে তারা সে চেষ্টা করেনি।
কওমী মাদ্রাসা দু’টির ফোরামের নেতারা অবশ্য দখলের হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের এই মসজিদ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে।
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের স্থানীয় নেতা মনজুর হোসেন অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার তাদের মসজিদে শিশুদের একটি অনুষ্ঠান চলার সময় হঠাৎ করে অসত্য গুজব ছড়িয়ে সেখানে হামলা করা হয়েছিল। এরপর স্থানীয় দু’টি কওমী মাদ্রাসা থেকে খতমে নবুয়তের ব্যানারে শুক্রবার মসজিদ দখলের হুমকি দেয়া হলে তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়।
তিনি জানিয়েছেন, জুম্মার নামাজের সময় তাদের মসজিদ ঘিরে গোটা এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়া হুমকির কারণে আগে থেকেই তারা তাদের মসজিদের ভেতরে অবস্থান নিয়েছিলেন।
মনজুর হোসেন বলেন, “গত ১৪ই জানুয়ারি আমাদের মসজিদে আক্রমণের পর থেকে আমরা আতংকগ্রস্ত ছিলাম। এরপর মসজিদ দখলের হুমকি আমাদের আরও উদ্বিগ্ন করেছিল। তবে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছিল। সেজন্য শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আমাদের কাছের দু’টি কওমী মাদ্রাসায় অনেক জমায়েত করলেও তারা আর এদিকে আসে নাই।”
“এখন পুলিশের তৎপরতার কারণে মসজিদ দখল করতে পারে নাই। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে আবারও কর্মসূচি দিয়েছে। ফলে আমাদের ভয় থাকছেই।”
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মসজিদের দুই পাশে দু’টি কওমী মাদ্রাসা। ফলে সেখানে আগে থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল বলে পুলিশ বলছে।
আহমদীয়া মুসলিম জামাত অভিযোগ করেছে, এক যুগ আগে তাদের একটি মসজিদ দখল করে নিয়েছিল আহমদীয়া সম্প্রদায়-বিরোধী একটি সংগঠন এবং সে সময়ই তারা এখনকার মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
তবে খতমে নবুয়তের নেতারা বলেছেন, জুম্মার নামাজের পর মাদ্রাসার ভিতরে তাদের জমায়েত থাকলেও তারা কোনো কর্মসূচি পালন করেন নাই।
তাদের অন্যতম নেতা সাজেদুর রহমান বলেছেন, মসজিদ দখলের কথা তাদের কোনো নেতার আগেকার বক্তব্যে এসেছিল। কিন্তু এই মসজিদ এবং আহমদীয়াদের বিরুদ্ধে আগামী ২০শে জানুয়ারি তাদের মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যহত রাখার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।
“আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এখন আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। কারণ এখন তাদের বিরুদ্ধে আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি যে তারা আমাদের কয়েকজনকে মারধর করেছিল। এখানে কারও কিছু দখলের বিষয় নেই। আমাদের কথা যে তারা মসজিদই করতে পারে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের সাড়ে তিনশ’র মতো পরিবার বসবাস করে। তাদের কয়েকটি মসজিদ থাকলেও কান্দিপাড়া এলাকার মসজিদটি ঐ জেলায় তাদের কেন্দ্র বা বড় মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয়।
ওই সম্প্রদায়ের একজন গৃহিণী কোহিনুর বেগম বলছিলেন, তাদের মসজিদ নিয়ে উত্তেজনার কারণে আতংকে তারা এখন ক’দিন ধরে বাড়ি থেকেই বের হতে পারছেন না।
“এখন ভয়ে আমরা মহিলারা ঘর থেকে বের হচ্ছি না। আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে আমরা এখন ঘরে বন্দী রয়েছি। এত ভয় নিয়ে কি থাকা যায়?”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেছেন, এলাকাটিতে দুই পক্ষ দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করলেও তারা পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগ করছে। তবে কয়েকদিন ধরেই সেখানে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে এবং শুক্রবার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
“এখানে দুই পক্ষ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছে। তবে উত্তেজনার শুরু থেকে অর্থাৎ গত মঙ্গলবার থেকে আমরা এলাকায় পুলিশের পাহারা দিচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।”
পুলিশ কর্মকর্তা মি: হোসেন আরও বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদীয় মুসলিম জামাতের মসজিদ নিয়ে উত্তেজনা এবং আতংকের পরিবেশ এখন আর নেই বলেই তারা মনে করছেন।