শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » জেলার খবর | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » আরকান আর্মির নিষেধাজ্ঞার পর বিকল্প পথে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে নৌযান
আরকান আর্মির নিষেধাজ্ঞার পর বিকল্প পথে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে নৌযান
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি: রাখাইনের মংডু শহর দখলে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এতে গত তিন দিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমার থেকে কোনও গোলার শব্দ আসেনি। তবে তিন দিন পর শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) মিয়ানমার থেকে ফের গোলার বিকট শব্দ এসেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। ফলে বাংলাদেশ সীমান্তে সর্তক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এ ছাড়া বিকল্প পথে গোলাচর হয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ নৌযান চলাচল চলাচল করছে। যাতে কোনোভাবে বাংলাদেশ জলসীমানা অতিক্রম না করে, সে জন্য সব নৌযান চলাচলকারীদের বিশেষভাবে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ৩০টির মতো নৌযান বিকল্প পথে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন গেছে বলে জানা গেছে।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা পশ্চিম অঞ্চলের জান্তা বাহিনীর কমান্ড হেডকোয়ার্টার দখলসহ রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, মংডু দখলে নেওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদের মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরকান আর্মি। আরাকান আর্মির ওই ঘোষণার পর নাফ নদে নৌযান চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়। এ ঘটনায় বাড়ানো হয়েছে বিজিবির টহল।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী ও মাছ ধরার ট্রলারসহ বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী নৌযান যাতে কোনোভাবে বাংলাদেশ জলসীমা অতিক্রম না করে সেজন্য বারবার বলা হয়েছে। আর জোয়ার-ভাটা নির্ভর করে শাহপরীর দ্বীপ গোলাচর রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে আমাদের বিজিবির পাশাপাশি কোস্টগার্ড নাফ নদ ও সাগরে টহল অব্যাহত রেখেছে।’
‘রাখাইনে এমন পরিস্থিতিতে যাতে নতুন করে কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তের বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে’, যোগ করেন ইউএনও।
এদিকে শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাট, মিস্ত্রিপাড়া ঘাট, দক্ষিণপাড়া ঘাট ও পশ্চিমপাড়া ঘাট থেকে ২০টির বেশি মাছ ধরার ট্রলার নাফ নদের বিকল্প পথ গোলারচর হয়ে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাটের জেলে মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘সীমান্তে আগের মতো এখন গোলার শব্দ পাওয়া যায় না। তবে মাঝখানে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। আমরা আজকে বেশ কয়েকটা মাছ ধরার ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছি। তবে বাংলাদেশ সীমানা যেন অতিক্রম না করি, সেজন্য বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর গফুর আলম বলেন, ‘আমার ঘাটে ২৫-৩০টি মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। আজকে আটটি ট্রলার বের হয়েছে। এ ছাড়া অন্য ঘাট থেকেও মাছ শিকারে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জেলেদের বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে ওপারে সীমানার দিকে না যায়। তবে সাগরে জলসীমায় বয়া না থাকার কারণে জোয়ার ভাটায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমা বুঝতে কষ্ট হয় জেলেদের। অনেক সময় সীমানা না বুঝে মিয়ানমারে ঢুকে পড়ে। তাই আমাদের সরকারের কাছে অনুরোধ, নাফ নদ ও সাগরে জেলেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিরাপত্তার পাশাপাশি সীমানায় বয়া দেওয়া খুবই জরুরি।’
এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে গত রবিবার মংডুতে সামরিক জান্তর বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশনের (নাখাখা-৫) শেষ চৌকিটিও দখল করা হয়েছে বলে এক বিবৃতে জানিয়েছেন আরাকান আর্মি। এতে নাফ নদের আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌকা, স্পিড বোট, লঞ্চ, জাহাজসহ কোনও ধরনের নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করে- যাতে বাংলাদেশের জেলে ও নৌযান জলসীমা অতিক্রম করতে না পারে।
এদিকে, মংডু শহর দখলে নেওয়ার তিন দিন পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে শুক্রবার ভোরে গোলার শব্দ এসেছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। ফলে এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কাও রয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন পর ভোরে ওপার থেকে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে সেটি অন্যবারের তুলনায় শব্দ কম ছিল। শুনেছি সেখানে মংডু পুরোপুরি আরাকান আর্মির দখলে। তাই সেখানকার রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টা করছে। ফলে তারা এপারে প্রবেশের শঙ্কাও রয়েছে। তবে আমাদের সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থানে আছেন।’
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ বলেন, ‘নাফ নদে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। পাশাপাশি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযানগুলো যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ রোধে আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি।’