সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাদী জানে না উনি কেডা, আইনজীবী পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আগাম জামিন
বাদী জানে না উনি কেডা, আইনজীবী পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আগাম জামিন
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে যে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে, সেই মামলার বাদী মো. বাকের (৫২) আসামিকে চেনেন না। বাকের বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি এ মামলা করেছেন। আর এ কাজে পুলিশ সহযোগিতা করেছে।হত্যাচেষ্টা মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
আজ সোমবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জেড আই খান পান্নাকে এই মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন।
জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে করা মামলায় গত ১৯ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর ১৭ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় মামলাটি করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের। এই মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামি মোট ১৮০ জন। ৯৪ নম্বর নামটি জেড আই খান পান্নার।
মামলার বাদি মো. বাকের বনশ্রী এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন।
আজ সোমবার বাকের মুঠোফোনে বলেন, তিনি জেড আই খান পান্নাকে চেনেন না এবং কীভাবে তার নাম আসামির তালিকায় এসেছে সেটাও জানেন না। আইনজীবী পান্না সম্পর্কে বাকের বললেন, ‘উনি কেডা জানি না।’
বাকের মুঠোফোনে বলেন, ‘বিএনপি আর জামায়াতের আইনজীবীদের সহযোগিতা নিয়া মামলা করছি। তাদের হুকুমেই তো হইছে। তারাই ভালো জানেন। পুলিশও হেল্প করছে। তাগোর সঙ্গে কথা কইলে বুঝতে পারবেন।’
বাকেরের কথা, তিনি তার ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চান। তাই মামলা দায়েরের জন্য তিনি তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
মামলা প্রসঙ্গে আরও জানতে চাইলে বাকের বলেন, ‘ভাই আমি অশিক্ষিত মানুষ। আর কাজ করি। এখন ব্যস্ত আছি। কিছু জানতে চাইলে থানায় যান। তারা সব জানে।’
জেড আই খান পান্না মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন । তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী নানা আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করার আদেশ চেয়ে গত ২৯ জুলাই আইনজীবীদের একটি দল হাইকোর্টে আবেদন করে। ওই আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থান করেন জেড আই খান পান্না। শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ২৯ জুলাই নাগরিক উদ্যোগে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সদস্যও ছিলেন তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই বিকেলে আহাদুল ইসলামসহ অন্যরা মেরাদিয়া বাজারের সামনে অবস্থান করছিলেন, তখন আসামিদের অনেকেই অজ্ঞাতনামা বিজিবি, পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্য কয়েকজন আসামির নির্দেশে গুলি চালায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আহাদুলসহ অন্যরা মেরাদিয়া বাজারের কাছে বিক্ষোভ করছিলেন। তখন নাম না জানা বিজিবি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্য আসামিদের নির্দেশে গুলি চালায়। এ সময় আহাদুল গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে থাকা আসামিরা তাকে মারধরও করে।
মামলাটিতে আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নাম রয়েছে।
মামলার বিষয়ে জেড আই খান পান্না গতকাল রোববার বলেন, ‘এটা কোনো না কোনো প্রভাবশালীর ইন্ধনেই হয়েছে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। অথচ আমি কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলাম। যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেই মেরাদিয়ায় আমি কখনো গেছি বলেও তো মনে হয় না।’
জেড আই খান পান্না জানান, তিনি আজ সোমবার হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করবেন।
কোনো ধরনের প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই এই মামলা নেওয়া হয়েছে বলে জানান খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন। তিনি গতকাল রাতে বলেন, বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে আসামিদের নাম-ঠিকানা সঠিক আছে কি না, সেটি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। তবে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, সেটি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, তদন্তের পর কেউ জড়িত না থাকলে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হবে।