শনিবার, ৩ আগস্ট ২০২৪
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার প্রাক-বিচার চুক্তি বাতিল
যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার প্রাক-বিচার চুক্তি বাতিল
বিবিসি২৪নিউজ,ফরিদা ইয়াসমিন (ওয়াশিংটন) যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গে: মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার শর্তে নাইন-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের দায় স্বীকার করতে রাজি হওয়া গুয়ানতানামোর তিন বন্দির সঙ্গে করা প্রাক-বিচার চুক্তি বাতিল করার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
শুক্রবার এক স্মারকে তিনি বলেছেন, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সামরিক আদালতের তত্ত্বাবধানে থাকা কর্মকর্তার ক্ষমতা বুধবার তিনি বাতিল করে দিয়েছেন।
স্মারকে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আছেন- খালিদ শেখ মোহাম্মদ, ওয়ালিদ মুহাম্মদ সালিহ মুবারক বিন আতাশ ও মুস্তাফা আহমেদ আদম আল-হাওসাভি। এর বাইরে রামজি বিন আল-শিব ও আলী আব্দুল আজিজ আলীর নাম আছে, যাদের নাম চুক্তিতে নেই।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুসান এসকালিয়ারের উদ্দেশে অস্টিন লিখেছেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে প্রাক-বিচার চুক্তির সিদ্ধান্তের দায়ভার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে তার ওপরই বর্তাবে।
“আমি আপনার কর্তৃত্ব (ক্ষমতা) প্রত্যাহার করছি। আমার ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনটি প্রাক-বিচার চুক্তি থেকে সরে এসেছি, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
বুধবার হোয়াইট হাউসের তরফে দাবি করা হয়েছিল, প্রাক-বিচার চুক্তিতে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদার সেই হামলায় নিউ ইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভেনিয়ায় প্রায় তিন হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর জের ধরে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান ও ইরাকে শুরু হয় অভিযান।
১৯৪১ সালে হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের পার্ল হারবারে জাপানি হামলার পর ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাতে বিবিসি লিখেছে, দুই যুগ আগের সেই হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাদের স্বজনদের কাছে কৌঁসুলিরা চিঠি পাঠানোর পর প্রাক-বিচার চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ পায়।
মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাব্য শাস্তি না দেওয়ার শর্তে অভিযোগপত্রে তালিকাভুক্ত ২,৯৭৬ জনকে হত্যাসহ সব অপরাধের দোষ স্বীকার করতে তিন অভিযুক্ত সম্মত হয়েছেন বলে ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল।
তাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা, আইন লঙ্ঘন করে হত্যা, উড়োজাহাজ ছিনতাই, সন্ত্রাসবাদসহ নানা অভিযোগ আছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে খালিদ শেখ মোহাম্মদ হামলার পরিকল্পনাকারী বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। হামলাকারীরা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষাদপ্তর পেন্টাগনের বাইরে বিধ্বস্ত করে। চতুর্থ বিমানটি পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা প্রকৌশলী খালিদকে ২০০৩ সালের মার্চে পাকিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কৌঁসুলিরা বলছেন, উড়োজাহাজ ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরিকল্পনা আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের কাছে তুলে ধরেছিলেন খালিদ। পরে তিনি কিছু ছিনতাইকারী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর গুয়ানতানামোর বন্দিশালায় খালিদের ওপর অন্তত ১৮৩ বার ‘ওয়াটারবোর্ডিংয়ের’ মত ‘জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল’ প্রয়োগ করা হয়েছিল।
এ পদ্ধতিতে বন্দির মুখ তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নাক-মুখের ওপর পানি ঢালা হয়। এর মাধ্যমে তার মনে পানিতে ডুবে মরার আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরে ওই কৌশল নিষিদ্ধ করে।
গত সেপ্টেম্বরে খালিদসহ গুয়ানতানামোতে আটক পাঁচজনের এমন একটি চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল বাইডেন প্রশাসন। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে নিশ্চয়তা চাইছিলেন, তাদের নির্জন কারাবাসে রাখা হবে না এবং ট্রমা চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়কে বুধবার নতুন চুক্তির কথা জানানো হয়েছে এবং তারা আলোচনায় কোনো ভূমিকা রাখেনি।
অভিযুক্তদের সঙ্গে চুক্তি করায় বাইডেন প্রশাসনকে আক্রমণ শুরু করে ভুক্তভোগীদের পরিবার ও রিপাবলিকানরা। এরপর সেই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।