বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ১৯
কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ১৯
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে নয়জনই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তারা প্রাণ হারিয়েছেন।
উত্তরায় সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের লাশ রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। অপর দুইজনের সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
এর আগে উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া যায়। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সব মিলিয়ে উত্তরায় ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে হাসপাতাল সূত্রে।
এদিকে ধানমণ্ডিতে সংঘর্ষে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারী, যাত্রাবাড়ীতে এক রিকশাচালক, সাভারে এক শিক্ষার্থী এবং মাদারীপুরে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। যাত্রবাড়ীর কাজলার পার এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক রিকশাচালক প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত রিকশাচালকের পরিচয় জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কাজলার পারের বটতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তাকে পথচারীরা আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকাল পৌনে ৬টায় মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, মৃতদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
তাকে উদ্ধার করে ঢামেকে আনা পথচারী রেজাউল ইসলাম অনিক ও সৌরভ বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলকারীদের সংঘর্য় চলছিল। এ সময় সময় রিকশাচালক আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পাশেই তার রিকশা পড়েছিল। আমরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি।
রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের সংঘর্ষ শুরু বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে। সহিংসতা চলছে রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি এলাকায়। সকালে মেরুল বাড্ডা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা পাশের রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধরা। সংঘর্ষ চলছে শনির আখড়া এলাকায়। এ ছাড়া মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকা দেড় ডজন সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব চালানো হয়। পরে আগুন অন্য ফ্লোরেও ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন।
রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় আন্দোলন করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে।
এদিকে উত্তরায় আন্দোলনকারীদের মারধরের ঘটনায় একজন র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতের নাম উত্তম। তিনি কনস্টেবল পদে কর্মরত। র্যাব বলছে, তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস জানান, উত্তরায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করছিল। এ সময় গাড়িতে থাকা র্যাবের একজন গাড়িচালক কনস্টেবল উত্তমকে একা পেয়ে বেধড়ক মারপিট করে আন্দোলনকারীরা। তাকে উদ্ধার করে একটি স্থানীয় হাসপাতাল নেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।