রবিবার, ২ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বাইডেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর
বাইডেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় প্রায় আট মাস ধরে যুদ্ধ চলমান। এ যুদ্ধকে অব্যাহত রাখার জন্য ইসরাইলকে পেছন থেকে শক্তি যোগাচ্ছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এবার গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন রূপরেখা তুলে ধরেছেন তিনি।
গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে শুক্রবার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাইডেন। প্রস্তাবে প্রথমে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং পরে ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। তবে মিত্র বাইডেনের সেই প্রস্তাবে রাজি নন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ‘না’ ইঙ্গিতে বাইডেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি।
শনিবার নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাসের সামরিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত রাখা হবে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে ইসরাইলের যে শর্ত রয়েছে সেটি পরিবর্তিত হয়নি। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইল তার শর্তে অটল থাকবে। এসব শর্ত পূরণ হওয়ার আগে ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে এমন ধারণা বাস্তব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
এদিকে বাইডেন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, তারা এতে ‘ইতিবাচক’। ইসরাইলের বিরোধী দলগুলোও এতে সমর্থন জানিয়েছে। হামাসের হাতে যেসব জিম্মি রয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই প্রস্তাব কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছেন।
যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তিন ধাপের প্রস্তাব দিয়েছেন বাইডেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউজে এক বক্তব্যে বাইডেন বলেছেন, প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে একটি ‘পরিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, সেই সঙ্গে জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের জিম্মি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রথম পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়াসহ বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মানবিক সহযোগিতা পৌঁছানোর অনুমতি দেবে। প্রথম দফা সফল হলে শুরু হবে দ্বিতীয় দফা।
এ চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে পুরুষ সেনাসহ সব জীবিত জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা হবে। এই যুদ্ধবিরতি তখন স্থায়ীভাবে দীর্ঘ শত্রুতার অবসান ঘটাবে। সবশেষ অর্থাৎ তৃতীয় দফায়, ইসরাইলি বন্দিদের কোনো কিছু গাজায় থেকে গেলে তা ফেরানো এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানানো হয়। এই চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শত্রুতা বন্ধ এবং গাজায় বড় ধরনের পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। হামাস বলেছে, তারা এই প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। এই প্রস্তাবে রাজি হতে হামাসকে যারা আহ্বান জানিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে বলেছেন, ‘এই চুক্তি অবশ্যই মেনে নিতে হবে, যাতে আমরা লড়াই বন্ধ দেখতে পারি।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বাইডেনের এই প্রস্তাবকে ইসরাইল-গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুযোগ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
শনিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ট্রুডো এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাইডেনের প্রস্তাবিত নতুন রূপরেখাটি একটি সুযোগ। এর জন্য এ নতুন রূপরেখাটি সব পক্ষকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ নতুন রূপরেখার মাধ্যমে গাজায় দুর্ভোগের অবসান করে শান্তির পথে ফিরে আসার সুযোগ। কানাডা অবিলম্বে ইসরাইল-গাজার যুদ্ধবিরতি, অবিলম্বে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং সব জিম্মিকে মুক্তির আহ্বান জানায়। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও এক্সে এই চুক্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সারাবিশ্ব গাজায় অনেক দুর্ভোগ এবং ধ্বংস প্রত্যক্ষ করছে। এখন এটি থেমে যাওয়ার সময়।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে প্রয়োজনে শান্তিরক্ষী সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক ইন্দোনেশিয়া। শনিবার এ কথা বলেছেন দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো। এশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সম্মেলনে শাংগ্রি-লা ডায়ালগে বক্তৃতা করার সময় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রাবোও আরও বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তিন ধাপের প্রস্তাব একটি সঠিক পদক্ষেপ ছিল।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। প্রাবোও বলেছেন, ‘যখন প্রয়োজন হবে এবং জাতিসংঘের অনুরোধ আসবে তখনই আমরা সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা ও তা পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি সব দল ও সব পক্ষকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদানের জন্য উল্লেখযোগ্য শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত আছি।’
তবে এর মধ্যেই মার্কিন এ প্রস্তাবে পানি ঢেলে দিলেন নেতানিয়াহু। গোটা বিশ্বের সমালোচনার মুখেও এখনো নিজ জায়গায় অনড় রয়েছে ইসরাইল।