মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » জেলার খবর | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » ঘূর্ণিঝড় রিমালের দুর্যোগে বাঁধ ভাঙে, মেরামত করেন ক্ষতিগ্রস্তরাই
ঘূর্ণিঝড় রিমালের দুর্যোগে বাঁধ ভাঙে, মেরামত করেন ক্ষতিগ্রস্তরাই
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ায় নিচু বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। জোয়ার শেষে নদীতে ভাটার টান লাগতেই বাঁধ মেরামতে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন স্থানীয় মানুষ। সোমবার বিকেলে খুলনার কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধে
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ায় নিচু বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। জোয়ার শেষে নদীতে ভাটার টান লাগতেই বাঁধ মেরামতে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন স্থানীয় মানুষ।
নদীর পানিতে ভাটার টান লাগতেই এক দল লোক ঝুড়ি কোদাল ও বাঁশ নিয়ে বাঁধ মেরামতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পরে সেখানে দলে দলে লোকজন এসে যোগ দেন কাজে। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই নিজেদের ভালো থাকার তাগিদে কাজে এসেছেন সবাই। সেখানে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী ও শিশুরা কাজে সহযোগিতা করেছে।
সোমবার বিকেলে খুলনার কয়রা উপজেলায় মহেশ্বরীপুর এলাকার ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি দুর্যোগের পর ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই এভাবে দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। এটা এখন এ অঞ্চলের মানুষের নিয়মিত কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামবাসী বলেন, যে ভাঙন মেরামতে এত পরিশ্রম, এত কষ্ট, সেখানে ভাঙার কথা ছিল না। বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আগে সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তাঁরা এড়িয়ে গেছে। অথচ বাঁধ ভাঙলে বারবার ভুক্তভোগী মানুষকেই তা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হয়।
সোমবার বিকেলে কয়রা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেছে, মানুষ কেবল মহেশ্বরীপুর এলাকায় বাঁধ মেরামত করছেন তা নয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার যে ১৭টি স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছিল, তা মেরামতের জন্য ভুক্তভোগীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
কয়রার গড়িয়াবাড়ী গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে আসা সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘একদিন আয় না করলে সংসার চলে না। তবুও বাঁচার তাগিদে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতি হচ্ছে। আমরা না করলি এ বাঁধ বানাতি অনেক দেরি হবে। তখন এলাকায় আর বাস করবার মতো পরিস্থিতি থাকবে না।’
মঠবাড়ি গ্রামের আনারুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধ মেরামত যাদের দায়িত্বের মধ্যি পড়ে, তারা কেউ সময় থাকতি এগোয় না। যত মরণ আমাগের মতো খাইটে খাওয়া মানুষের।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সোমবার ভোরের দিকে কয়রার মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালী, আমাদী, কয়রা সদর, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৭টি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। সকালে নদীতে জোয়ার শেষ হলে স্থানীয় লোকজন সেসব স্থানে মেরামতের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে প্রাণপণ চেষ্টা করে। বাঁধের ওপর কাদামাটি ভর্তি বস্তা দিয়ে উঁচু করলেও দুপুরের তীব্র ঝোড়ো বাতাস আর ভারী বৃষ্টিতে কয়েকটি জায়গায় পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁধ। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরচর এলাকার বাঁধ।
কয়রার দশালিয়া গ্রামের কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, জোয়ারের সময় বাঁধের একেবারে কিনারে পানি চলে এলে এলাকাবাসী বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেন। ভোর পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চলে। বাঁধ অনেকটা মেরামত করা সম্ভব হলেও ভোরের দিকে জোয়ারের আবারও ভেঙে গেছে।