শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » আফ্রিকা | আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » জিম্মি জাহাজটি বারবার স্থান পরিবর্তন করছে
জিম্মি জাহাজটি বারবার স্থান পরিবর্তন করছে
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সোমালি জিম্মিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে এরই মধ্যে খাবার ও পানীয় সংকট শুরু হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। জাহাজটিতে ২৫ দিনের খাবার থাকলেও জলদস্যুরা ভাগ বসানোয় তা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বর্তমানে যে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি রয়েছে, তা দিয়ে আর ১০ থেকে ১২ দিন চলতে পারে।
জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান জিম্মিদশা থেকে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহর ছোট ভাই আবদুল্লাহ খান আসিফ শনিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় বলেন, ‘গতকাল বিকেলে (শুক্রবার) ভাবির সঙ্গে কথা বলার সময় ভাইয়া জানিয়েছেন, ৪০ জন জলদস্যুও এখন নাবিকদের জন্য মজুদ থাকা খাবার-পানি গ্রহণ করছে। দস্যুরা খাওয়ার কারণে এখন যে খাদ্য ও পানীয় আছে, তা দিয়ে বড়জোর ১০ থেকে ১২ দিন চলবে। এরপর কী হবে তা নিয়ে নাবিকরা উদ্বেগে রয়েছেন।’
আতিক উল্লাহ খান তাঁর স্ত্রীকে আরো জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি।
তাঁরা সব মিলিয়ে ভালো আছেন। তিনি সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন।
জিম্মি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জলদস্যুরা গত শুক্রবার বিকেলে স্থান পরিবর্তন করে সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাহাজটি শুক্রবার যে অবস্থায় ছিল এখনো সেভাবে রয়েছে।
জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে নাবিকদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। শুনেছি জাহাজটি স্থান পরিবর্তন করে যেখানে নোঙর করেছিল সেখানেই আছে।’
এগিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনী
ভারতীয় নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সশস্ত্র জলদস্যুরা জাহাজের নাবিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখায় তারা আর কিছু করতে পারেনি। ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘এক্স’ অ্যাকাউন্ট ‘স্পোকসপারসন নেভি’ থেকে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং লং রেঞ্জ মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট (এলআরএমপি) এগিয়ে গিয়েছিল।
মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেনও কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ভারতীয় নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারে এগিয়েছিল। কিন্তু জিম্মি নাবিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আর বেশি অগ্রসর হয়নি।’
ভারতীয় সংবাদপত্র টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনীর দূরপাল্লার পিএইট-আই বিমান এগিয়ে গিয়েছিল। জাহাজের অবস্থান চিহ্নিত করার পর ক্রুদের অবস্থা জানতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ভারতীয় নৌবাহিনী। কিন্তু তখন এমভি আবদুল্লাহ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ওই অভিযানে মোতায়েন করা ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি ফ্রিগেট গত বৃহস্পতিবার সকালে জাহাজটির কাছাকাছি গিয়েছিল। বাংলাদেশি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে তারা।
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান গত বৃহস্পতিবার তাঁর পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেছিলেন, সেদিন দুপুরের দিকে জাহাজটি নিয়ে জলদস্যুরা যখন সোমালি উপকূলে পৌঁছয়, তখন দুটি সামরিক জাহাজ তাঁদের অনুসরণ করছিল।
সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটালান্টা এরই মধ্যে এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণের বিষয়টি জানিয়েছে।
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালি সশস্ত্র জলদস্যুর কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। ক্যাপ্টেন, চিফ অফিসারসহ ২৩ নাবিক পাঁচ দিন ধরে জিম্মি রয়েছেন। দস্যুরা মুক্তিপণ নিয়ে এখনো কোনো দাবি করেনি বলে জাহাজ মালিকপক্ষ দাবি করেছে। তবে নাবিকদের উদ্ধৃত করে মিডিয়ায় ক্ষতিপূরণের দাবির কথা প্রকাশিত হয়েছে।