মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » মিয়ানমারে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত চলছে
মিয়ানমারে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত চলছে
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশে দুজন নিহত, সীমান্তে আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছেন অনেকে, পালিয়ে এসেছে ১০৩ মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী, ৬২ সেনাকে হত্যা বিদ্রোহীদের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের ৬২ সৈন্য নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আক্রমণের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে দেশটির ১০৩ সীমান্তরক্ষী। এদিকে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশও।
গতকাল ওপার থেকে ছুটে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয় এক শিশুও। আগের দিনও ওপার থেকে ছুটে আসা গুলিতে পাঁচ বাংলাদেশি আহত হন। দুই বাহিনীর গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে সীমান্তজুড়ে।
গুলির মুহুর্মুহু শব্দে আতঙ্কে ঘর ছেড়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে এই যুদ্ধ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সে দেশের একের পর এক সীমান্তরক্ষী বা সেনা সদস্যের অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশেও। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী।
এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে তিনি এ কথা জানান।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যেকার তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্তের তিনটি স্থান দিয়ে গতকাল দুপুর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপির সদস্যরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০৩ জন প্রবেশের তথ্য দিয়েছে বিজিবি সদর দফতর। এমন অবস্থায় সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মাশরুকী বলেন, মূলত সীমান্তের তিনটি জায়গা থেকে মিয়ানমারের সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাদের প্রথমেই কর্ডন ও অস্ত্র আলাদা করেছি এবং তাদের আমরা নিরাপদ স্থানে রেখেছি। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গতকালও দিনভর মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। গোলাগুলির সময় কিছুক্ষণ পরপর মিয়ানমার সীমান্তে হেলিকপ্টারের মহড়া দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর পাহারা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই অংশে ছোট-বড় তিনটি ক্যাম্প গত শনিবার পর্যন্ত জান্তাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রবিবার সকালেই ৩৪ পিলার রাইট ক্যাম্পটি দখলে নেয় বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। রাতে ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্পে তুমুল সংঘর্ষ হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, আরাকান আর্মি ১৩ নভেম্বর রাখাইনে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করার পর সিতওয়ের নিকটবর্তী পাউকতাও শহর এবং চিন প্রদেশের পালেতাওয়া শহরসহ ১৬০টি অবস্থান থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে উৎখাত করেছে।
মিয়ানমারের ৬২ সৈন্য নিহত : বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর উপর্যুপরি হামলায় নাস্তানাবুদ মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী। দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় জান্তাদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে বিদ্রোহীরা। গত তিন দিনে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর (এফএও) বিদ্রোহীদের কাছে আরও কয়েকটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে দেশটির সরকারি বাহিনী। একই সঙ্গে তাদের ৬২ সেনা নিহত হয়েছেন। মিয়ানমারের জান্তার সমালোচক গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত ইরাবতীর খবরে বলে হয়, সাগাইং, মাগউই ও মান্দালে অঞ্চল এবং কাচিন ও কারেন প্রদেশে এই হতাহত ও ঘাঁটি দখলের ঘটনা ঘটেছে। অং সান সু চি-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) সামরিক শাখা হচ্ছে পিডিএফ।
বাংলাদেশে দুজন নিহত : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে গতকাল একজন বাংলাদেশি নারী ও একজন রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মর্টার শেলটি এসে পড়ে। নিহত নারী জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা (৫৫)। নিহত রোহিঙ্গার নাম নবী হোসেন (৬৫)। তিনি হোসেনে আরার বাড়িতে ধান খেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন। এ সময় হোসনে আরার নাতনি নুসরাত মণি (৬) আহত হয়। বিজিবির কক্সবাজার রিজিওয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম গতকাল জানান, জলপাইতলীতে দুজন সাধারণ নাগরিক নিহতের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে মিয়ানমার সরকারকে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর করার জন্য পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ১০৩ সীমান্তরক্ষী : মিয়ানমারের বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মির আক্রমণের মুখে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারের ১০৩ জন সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে আছেন। বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ভিড় : মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির চাকমা সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০০ জন। পাশাপাশি অনেক রোহিঙ্গাও সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমার থেকে কোনো রোহিঙ্গা অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাইশপারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আক্তারুন্নাহার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ ও চীনের সহযোগিতা চাইলেন ওবায়দুল কাদের : মিয়ানমার ইস্যুতে আর উদারতা দেখানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই বাস্তুচ্যুতদের আর ঢুকতে দেওয়া হবে না। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে কয়েকটি গ্রাম নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ওই দেশ থেকে ছোড়া মর্টারের শেল পড়ছে আমাদের সীমান্তে। আকাশসীমাও লঙ্ঘন করছে। তাদের সমস্যার জন্য আমরা সমস্যার সম্মুখীন হব কেন? এ ব্যাপারে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। চীনের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, যেহেতু মিয়ানমার চীনের কথা শোনে, তাই তাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।