
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ
বিবিসি২৪নিউজ,এম ডি জালাল, দুবাই থেকে ফিরে: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত তহবিল গঠন করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), স্বল্পোন্নত দেশের তহবিল (এলডিসিএফ), অভিযোজন তহবিল (এএফ) এবং জিইএফ ট্রাস্ট তহবিলকে পর্যাপ্ত সংস্থান দিয়ে শক্তিশালী করা এবং সেই তহবিলের প্রবেশাধিকার দ্রুত ও সহজ করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৮) বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল থেকে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ মনে করে, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে দুবাই অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে। পরে জলবায়ু সম্মেলনের সাইড লাইনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য রাখতে ২০৩০ সালের জন্য নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতির উচ্চাকাঙ্ক্ষা সাত গুণ বেশি হওয়া দরকার। বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোকে তাদের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিযোজন ও প্রশমন এবং অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়নের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ৫০:৫০ বরাদ্দের পক্ষে দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের অবস্থান। আমরা নতুন এবং অতিরিক্ত সরকারি অর্থায়নে গুরুত্ব দেব। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল এবং সমর্থনের ওপর জোর দেয়, যা ৪৯টি দেশের অগ্রাধিকার- যারা ইতোমধ্যে তাদের এনএপি প্রস্তুত করেছে এবং জমা দিয়েছে। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উন্মুখ। এ বিষয়গুলো সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে।’
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে অটল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন, যার উদাহরণ ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘জিসিএ লোকাল অ্যাডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তি।’’
পরিবেশমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘উভয় প্রশমন কর্ম কর্মসূচির অগ্রগতি, গ্লোবাল স্টক টেকের (জিএসটি) অধীনে প্রশমন এবং ন্যায্য রূপান্তর কাজের প্রোগ্রাম উল্লেখযোগ্যভাবে অপর্যাপ্ত।’ তিনি জরুরিভিত্তিতে জলবায়ু অর্থের একটি সাধারণ সংজ্ঞা ঠিক করতে অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির (এসসিএফ) প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জলবায়ু সম্মেলনের মধ্যে শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তার মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ইতোমধ্যে গ্রিন এনার্জিখাতে বিনিয়োগ করা ৫০ বিলিয়ন ডলারের সঙ্গে আগামী এক দশকে আরও ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে নতুন ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়, যাতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নরোধে ভূমিকা রাখবে। এরমধ্যে রয়েছে জৈব বৈচিত্র্য কৌশল ২০৩১-এর সাধারণ কাঠামো- যার লক্ষ্য প্রাকৃতিক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ, সুরক্ষা ও টিকিয়ে রাখা। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে সরকারি ও বেসরকারি অবদানগুলো স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি কার্বন ক্রেডিটগুলোর জন্য একটি জাতীয় রেজিস্ট্রি চালু করার সাথে বর্জ্য সেক্টরকে ডিকার্বনাইজ করার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগও গৃহীত হয়েছে।
কপ২৮ সম্মেলনে এখন পর্যন্ত লস অ্যান্ড ড্যামেজ খাতে ৭৪৬ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় প্রতি বছর লস অ্যান্ড ড্যামেজের আর্থিক মূল্য প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে নতুন ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিলেও এ খাতে প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ততা কাটিয়ে উঠতে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা প্রত্যাশা করে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী। তবে এ ক্ষেত্রেও আরও অনেক সময় ও কর্মকৌশল নির্ধারণের বিষয় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে শ্রীলঙ্কার প্যাভিলিয়নে সাউথ এশিয়ান কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম আয়োজিত ‘স্থল এবং মহাসাগরে প্লাস্টিক দূষণ’ নিয়ে একটি সাইড ইভেন্টে প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সাকেপের মহাপরিচালক রোকেয়া খাতুন এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্যানেলটি পরিচালনা করছেন সিমোনেটা সিলিগাতো। প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের রিনচেন পেঞ্জোর, নেপালের ড. দীপক কুমার খারাল, পালিন্দা পেরেরা ও মিসেস অঞ্জলি দেবরাজা।