শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হতে হবে: প্রধান বিচারপতি
রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হতে হবে: প্রধান বিচারপতি
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। অন্যথায় কোনোদিন একটি সুন্দর সমাজ গঠন করা যাবে না এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় প্যানেল আইনজীবীদের ভুমিকা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মানবাধিকার রয়েছে। তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশেরও মানবাধিকার রয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করলে যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। ঠিক তেমনি পুলিশের ওপরও অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করলে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়।
মানবাধিকার রক্ষায় প্যানেল আইনজীবীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, মানবের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনজীবীদের। লিগ্যাল এইডের মতো মানবাধিকার প্যানেল আইনজীবীদের কাজ করতে হবে। মামলার এজাহারে আসামির নাম বিকৃতি করে উপস্থাপন করাও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আসামিদের পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরানো প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, শুধুমাত্র ভয়ঙ্কর আসামিদের আদালতের অনুমতি নিয়ে ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা আমরা একটা রায়ে বলে দিয়েছি। কারণ, ডান্ডাবেড়ি পরানো না থাকায় কিছুদিন আগে ঢাকার আদালত থেকে আসামিরা পালিয়েছে। বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাবাস ও পাবনায় মানসিক রোগীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মৌলিক অধিকার একেক দেশে একেক রকম। কিন্তু মানবাধিকার সারা বিশ্বে এক রকম। মানবাধিকার প্রয়োগ হয় আইনের মাধ্যমে। এজন্য আইন বিভাগ আছে আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে। আর বিচার বিভাগ আছে আইন প্রয়োগের প্রয়োজনে। আর সেই আইন প্রযুক্ত হয় আইনজীবীদের কর্মকুশলতায়। মানবাধিকারের সঙ্গে তাই আইনজীবীদের সম্পর্ক আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা। মানবাধিকার কমিশনের প্যানেল আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ালে মনে রাখবেন, আপনি মানবাধিকারকর্মী। নিজ পেশার প্রতি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হোন। তিনি মানবাধিকার কমিশনকে হাজতে থাকলে হাজতবাসীদের জন্য খাবারের বাজেট আছে কিনা; দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে যারা আছেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালে মানসিক রোগী না হয়েও যারা আটক আছেন তাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আেমাদের দেশের সঙ্গে বর্ডার আছে দুটি দেশের ভারতের এবং মিয়ানমারের। সমুদ্রসীমায় থাইল্যান্ডের সঙ্গে থাকলে থাকতে পারে। আমার মনে হয়, বর্ডার ট্রাইব্যুনালের চিন্তা কিন্তু একেবারে খারাপ না। বর্ডারে যে ডিসপিউটগুলো হয়, সেখানে যদি ট্রাইব্যুনাল থাকে, সেখানে যদি বিচার শেষ হয়ে যায়, নিস্পত্তি তাড়াতাড়ি হয়ে যেতে পারে বলে আমার মনে হয়। এটা সরকার চিন্তা করতে পারে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও সুসংহত করণের লক্ষ্যে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা প্রদানে কমিশন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় প্যানেল আইনজীবীরা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, পরিচালক কাজী আরফান আশিক। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান প্রমুখ। সারা দেশ থেকে আগত ২৫০ জন কমিশনের প্যানেল আইনজীবী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।