মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | রাজনীতি | শিরোনাম | সাবলিড » নারায়ণগঞ্জে তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম,কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নারায়ণগঞ্জে তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম,কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ জন নিহত
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখী বাজার এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
আহত তিন পুলিশ সদস্য হলেন—পরিদর্শক হুমায়ুন কবির, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মতিন ও কনস্টেবল মো. নুরুল।নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন বলেন, কনস্টেবল নুরুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরের ডান হাত কুপিয়ে জখমের পর পিটিয়ে বাঁ হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এএসআই মতিনকে লাঠি ও ইটপাটকেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। নুরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি দুজনকে রূপগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ৭২ ঘণ্টার অবরোধের সমর্থনে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মিছিল করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সহসম্পাদক নজরুল ইসলাম। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাঁশের লাঠি হাতে গাছের গুঁড়ি, আরসিসি খুঁটি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে। অবরোধকারী নেতা–কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েন।সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেন। তিনজন পুলিশ সদস্যকে তাঁরা ধরে ফেলেন। পরে তাঁদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেন তাঁরা। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন। থানা থেকে আরও পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সড়ক ছেড়ে চলে যান। সংঘর্ষের সময় ঢাকা-নরসিংদী সড়কে চলাচলকারী অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করেন অবরোধকারী ব্যক্তিরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পুলিশের চেষ্টায় সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
সংঘর্ষে নিজেদের অন্তত ১৭ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি নজরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সড়কে মিছিল করছিলাম। পুলিশ বিনা কারণে আমাদের ওপর হামলা করে। পরে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন যুক্ত হয়। তাঁরা আমার বাড়িঘরও ভাঙচুর করেছেন।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমির খসরু বলেছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে অবরোধের প্রথম দিনে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে মহাসড়কের কাঞ্চন ও একই মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের নয়াপুর এলাকায় বিএনপির নেতা–কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছেন।কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে পুলিশ। তবে বিএনপির দাবি, পুলিশের গুলিতে তাঁদের দুজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে উপজেলার ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনায় দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল মিল্লাত বলেন, ‘আমাদের মিছিল ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচার গুলি ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে রিফাত ও বিল্লাল নামে আমাদের দুইজন নেতা মারা যান।’রিফাত উল্লাহ উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি। বিল্লাল মিয়া একই ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি। রিফাতের মরদেহ বর্তমানে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। বিল্লালের মরদেহ ঘটনাস্থলে আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। ঘটনার পর পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মস্তুফা বলেন, মিছিলকারীরা প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা চালান। হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের অনেকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওসি বলেন, তাঁর জানামতে এ ঘটনায় একজন মারা গেছেন। তবে সেটি গুলিতে, নাকি অন্য কোনো কারণে মারা গেছেন, তা নিশ্চিত নয়।বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, অবরোধের প্রথম দিনে আজ সকাল আটটার দিকে ছয়সূতি ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নিয়ে উপজেলার ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ামাত্র আগে থেকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন।
তবে পুলিশের দাবি, মিছিলকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আগে পুলিশের ওপর হামলা করেন। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ পাশের একটি বাড়িতে অবস্থান নেয়। সেখানে গিয়েও বিএনপির কর্মীরা হামলা করেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিছিলকারীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।