শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১
BBC24 News
মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » আফ্রিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » মালি থেকে জাতিসংঘ বাহিনীর পরিবর্তে ওয়াগনার বাহিনী?
প্রথম পাতা » আফ্রিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » মালি থেকে জাতিসংঘ বাহিনীর পরিবর্তে ওয়াগনার বাহিনী?
৫৮১ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মালি থেকে জাতিসংঘ বাহিনীর পরিবর্তে ওয়াগনার বাহিনী?

---বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়ে গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে যে ভোটাভুটি হয় সেটির ফল কী হবে তা নিয়ে কখনোই সংশয় ছিল না - এই শান্তিরক্ষা মিশন বাতিল করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না নিরাপত্তা পরিষদের। কারণ বিশ্বে জাতিসংঘের এ ধরণের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক।

মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন শুরু হওয়ার পর গত দশ বছরে সেখানে ১৮৭ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছে।

তবে নিহতের এই মোট সংখ্যার কারণেই যে জাতিসংঘ মালি ছাড়ছে তা নয়।

মালির সামরিক শাসকই আসলে দাবি জানাচ্ছেন, ১২ হাজার আন্তর্জাতিক সৈন্যকে দেশ ছাড়তে হবে, যদিও দেশটির নিরাপত্তা সংকট যে কেটেছে তার কোন লক্ষণ নেই।

যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা মালি ছেড়ে চলে যাবে, দেশটি তখন রাশিয়ার ওয়াগনার ভাড়াটে সেনাদলের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ধারণা করা হয়, মালিতে এখন ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় এক হাজার সেনা আছে সেখানকার নিরাপত্তায় সহযোগিতা করার জন্য।

মালি এক বিশাল দেশ, পশ্চিম আফ্রিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল হতে শুরু করে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির উত্তর এবং মধ্যাঞ্চল জুড়ে জিহাদি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর তৎপরতা আছে এবং তারা সেখানে নিয়মিত আক্রমণ চালায়।

লড়াকু সেনাদল হিসেবে ওয়াগনার গ্রুপের ভীতিকর ভাবমূর্তি আছে, কিন্তু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা কতটা সক্ষম - তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ইউক্রেন রণাঙ্গন থেকে আরও অতিরিক্ত সেনা এনে সেখানে মোতায়েন করা হলেও এ প্রশ্ন থেকে যাবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট অবশ্য মনে করেন ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রকে খোঁচানোর জন্য মালিতে তাদের উপস্থিতি দরকার, একই সঙ্গে পশ্চিম আফ্রিকায় রাশিয়ার উপস্থিতি জোরালো করতেও এর প্রয়োজন আছে।কিন্তু ফরাসী সেনাদল বারখানের যে ধরণের শক্তি সামর্থ্য ছিল, ওয়াগনার গ্রুপের তা নেই। ফরাসী সৈন্যরা বিমান হামলার সক্ষমতা, সাঁজোয়া বহর, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এবং রসদ সরবরাহ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট থেকে গোয়েন্দা তথ্য - অনেক ধরণের সমর্থন পেত। কিন্তু মালির সঙ্গে দেশটির সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার পর ফরাসী সৈন্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয় গত বছর।

ওয়াগনার গ্রুপের ইউনিটগুলো মূলত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখলে রাখার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দেবে বলে মনে হয়।

একটি সার্বিক কৌশলগত লড়াই চালানোর পরিবর্তে এসব ঘাঁটি থেকে তারা বরং মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা এবং টহল দেয়ার মতো কার্যক্রম চালাতে পারে।

গত ১১ মাস ধরে মালির সরকার জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ফরাসী বাহিনীর পরিবর্তে ওয়াগনার গ্রুপের ওপরই বেশি নির্ভর করেছে। এই সময়টাতে জিহাদি গ্রুপগুলো তাদের তৎপরতা আরও তীব্র করেছে এবং তাদের সীমানাও আরও বিস্তৃত করেছে।

যখন জাতিসংঘও চলে যাবে, তখন এই ধারাটি আরও গতি পাবে। ওয়াগনার ভাড়াটে সেনাদল যেরকম কট্টরপন্থী কৌশলের পক্ষপাতী, সেটি তুয়ারেগ এবং পিউলহ (ফুলানি নামেও পরিচিত) গোষ্ঠীগুলোকে আরও দূরে ঠেলে দিতে পারে।

মালিতে কৃষিজীবী এবং পশুপালক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, সেটি দেশটির মধ্যাঞ্চলের চলমান সহিংসতায় যেন আরও উস্কানি দিচ্ছে। অথচ নাইজার নদীর এই উর্বর বদ্বীপ ভূমি পশ্চিম আফ্রিকার শস্য ভাণ্ডার হতে পারতো।

এই নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে দেড় হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মালির রাষ্ট্র, সরকারী প্রশাসন এবং জরুরী সেবা ব্যবস্থার কোন উপস্থিতিই নেই উত্তরের অনেক এলাকায়।

একটি পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠী অ্যাকলেড বলছে, কেবল এবছর ৬৮২টি ঘটনায় ১ হাজার ৫৭৬ জন নিহত হয়েছে।বিশেষ করে খারাপ পরিস্থিতি হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের, যেখানে হাজার হাজার মানুষ তাদের গ্রাম ছেড়ে মরুভূমির মাঝের এক শহর মেনাকার আশপাশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মিশন প্রত্যাহার করা হলে এই উত্তরাঞ্চলের মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাবে।

---সেনাবাহিনী সম্প্রতি কিছু সাফল্যের দাবি করেছে, কিন্তু বাস্তবে আসলে তারা লড়াই চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। এমনকি শত শত মাইল দক্ষিণে রাজধানী বামাকোর কাছাকাছি এলাকাতেও হামলা হয়েছে।

মালির সামরিক শাসক কর্নেল আসিমি গোইটা ২০২০ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে।

এরপর থেকেই তিনি দাবি জানাচ্ছেন জাতিসংঘ বাহিনী - যেটি মিনুসমা নামে পরিচিত - সেটি যেন সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয় এবং মালির জাতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে।

কিন্তু জাতিসংঘ বাহিনীর ম্যান্ডেট হচ্ছে শান্তিরক্ষা করা - বেসামরিক মানুষকে জঙ্গিদের হামলা থেকে রক্ষা করা, প্রয়োজনীয় জনসেবা এবং মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমে সমর্থন দেয়া। ২০১৫ সালের চুক্তিতে সেকথাই বলা আছে।

এই চুক্তির অধীনে উত্তরের তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একটি ঐক্যবদ্ধ মালির মধ্যে থাকতে রাজী হয়, পরিবর্তে তাদের এলাকায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।করে। এরা এসেছিল দীর্ঘমেয়াদী এক চুক্তির অধীনে জাতিসংঘের স্থাপনাগুলো পাহারা দিতে। কিন্তু মালির সরকার তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনলো। এদের মধ্যে তিন জন ছাড়া বাকী সবাইকে গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। অনেক দীর্ঘসময় ধরে আলোচনার পর তখন তাদের মুক্তি দেয়া হয়।

জাতিসংঘ মিশনের কার্যক্রম চালানো যখন ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল, তখন আইভরি কোস্ট, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং সুইডেন তাদের সেনাদল প্রত্যাহার করবে বলে ঘোষণা করলো।

তবে জাতিসংঘের সঙ্গে মালির সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে ভেঙে গেল এ বছরের মে মাসে জাতিসংঘের এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর। মালির মধ্যাঞ্চলের মৌরা নামের একটি গ্রামে ২০২২ সালের মার্চে বেসামরিক মানুষদের হত্যার বিষয়ে এই তদন্ত চালানো হয়েছিল।

মালির সরকার জাতিসংঘ মিশন মিনুসমাকে ঐ এলাকায় যেতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরও জাতিসংঘ বাহিনী কাছাকাছি এলাকার লোকজনের কাছে যেতে সক্ষম হয়। তারা ঐ ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অনেক মানুষদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং অনেক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।

---জাতিসংঘ তদন্ত দলের রায় ছিল সুস্পষ্ট: মৌরা গ্রামে ২০২২ সালের মার্চে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্র বিদেশী যোদ্ধাদের হাতে পাঁচশোর বেশি মানুষ নিহত হয়। বিদেশী যোদ্ধা বলতে সুস্পষ্টভাবেই ওয়াগনারের প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছিল।

এই রিপোর্টের পর মালির সরকার বেশ ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখালো। তারা তদন্ত কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের হুমকি দিল। তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, এবং মালির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলো।

এরপর যে মালির সরকার তাদের দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম দ্রুত গুটিয়ে নিতে বললো, তাতে কেউ অবাক হননি।এদিকে জাতিসংঘ মিশন মিনুসমার বিরুদ্ধে জনমতও সংগঠিত হচ্ছিল কিছুদিন ধরে।

“পুরো মালিয়ান জাতি আসলে নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করছে” - সাম্প্রতিক এক টিভি টকশোতে একজন অংশগ্রহণকারী মন্তব্য করেছিলেন।

এই টিভি শোর উপস্থাপক নিজেও জাতিসংঘ বাহিনীকে দেশছাড়া করার দাবিটিকে ‘নিপীড়ক এবং পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে আরেক লড়াই’ বলে বর্ণনা করছিলেন। যদিও জাতিসংঘ বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য আসলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা।

কর্নেল গোইটা মাত্রই এক গণভোটে নতুন এক সংবিধানের পক্ষে সমর্থন পেয়েছেন। এই সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এবং সামরিক নেতাদের সামনের বছরে হতে যাওয়া নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন জাতিসংঘও যেহেতু বিদায়ের পথে, তাই কর্নেল গোইটা তার ইচ্ছেমাফিক নিজের এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।

---তবে মালির সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দেশটির মধ্যাঞ্চল এবং উত্তরের নাজুক অঞ্চলের মানুষেরা জাতিসংঘ বাহিনীর অনুপস্থিতি অনুভব করবে।

এই বাহিনী যদিও জিহাদিদের হামলা বন্ধ করতে পারেনি, তারপরও একটা পর্যায়ে পর্যন্ত জিহাদির তারা ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল। যার ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং এলাকায় ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গিয়েছিল। যার ফলে মৌলিক জনসেবা এবং প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা গেছে।

বিশেষ করে জাতিসংঘের উপস্থিতির কারণে উত্তরের বিদ্রোহী গ্রুপ-গুলোর সঙ্গে করা চুক্তিটি টিকে ছিল। কারণ এসব গ্রুপ মালির সামরিক সরকারকে মোটেই বিশ্বাস করে না।

এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী চলে গেলে উত্তরের যেসব এলাকায় সেনাবাহিনী এবং ওয়াগনার গ্রুপ লড়াই চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে, সেসব এলাকা কার্যত স্বায়ত্তশাসনের দিকে চলে যেতে পারে।



আর্কাইভ

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত
পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ
ইলন মাস্কের রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে হাজির ট্রাম্প
লেবাননে নিহত দুই শতাধিক শিশু: ইউনিসেফ
মার্তিনেজের ধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়ালেন পুতিন
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হয়নি: হাসনাত
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি স্বাক্ষর