রবিবার, ২৫ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে এমন একটি মানুষ দেখান: প্রধানমন্ত্রী
দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে এমন একটি মানুষ দেখান: প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নতি করতে হলে আওয়ামী লীগকেই দরকার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো অনেক রকমের কথা শুনি। আজকেই সরকার ফেলে দেবে। কালকেই এটা করবে, ওইটা করবে। আজ যে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মর্যাদা পেলাম, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে এটা বাস্তবায়ন করবে কে? আমাকে একটা লোক দেখান যে সে করতে পারবে। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে, একটি মানুষ দেখান! সেরকম কোনও নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনও আপত্তি নাই। আমরা জানি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে উন্নতি করতে হলে আমাদেরই দরকার।
রবিবার (২৫ জুন) সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশবাসীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতি এটাই বলবো, বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, দেশের সেবা করতে পেরেছি। দেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে পেরেছি। দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। আজ বেকারত্বের সংখ্যা মাত্র তিন ভাগ। ডিজিটাল পদ্ধতি হয়েছে। ছয় লাখের মতো ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছে। তারা ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করছে। আমরা পিছিয়ে থাকবো না। আমরা এগিয়ে যাবো।
বাজেট দিতে পেরেছি সেটাই বড় কথা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ের মধ্যে এবারের বাজেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বিশ্বে বেড়েছে। যার আঘাত বাংলাদেশেও লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশনের কারণে অনেক অর্থনৈতিক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমরা বাজেট দিতে পেরেছি সেটাই সব থেকে বড় কথা।
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এই বাজেট দিতে পারছি। এই বাজেটটি আমাদের মেয়াদের ১৫তম এবং চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। কারণ, নির্বাচন এই বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে হবে। কাজেই এটা আমাদের শেষ বাজেট। তবে একেবারে শেষ কিনা সেটা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকেই আমি দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন। নানা ধরনের কথা বলেছেন। অনেকে সংস্কারের কথা বলেছেন। আলোচনা-সমালোচনা যাই করুক না কেন বাজেট নিয়ে যে তারা চিন্তা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছরের বাজেট নিয়ে যারা মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
সরকারি দফতরকে বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, দফতর সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ, আসল ও বিনিয়োগের মুনাফা বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ দেনা করেছে। অর্থ বিভাগ এসব পাওনা আদায়ের জন্য চেষ্টা করছে। সব প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সেখানে আমাদের বিদ্যুতেও আছে। অনেক জায়গায় বিল দেওয়া হয়নি। সেগুলো আমরা দিয়ে দেবো।
কিছু লোক কোনও কিছুই ভালো চোখে দেখে না
এবারের বাজেটকে অনেকেই উচ্চাভিলাষী বলেছে বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, অনেকেই বলছে এটা বাস্তবায়নযোগ্য না। এ কথাগুলো সবসময় শুনে থাকি। কিছু লোক আছে সবকিছুতে নেতিবাচক কথা বলা অভ্যাস। তারা কোনও কিছুই ভালো চোখে দেখে না। সেটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্য। আমি এটুকু বলতে পারি তারা হয়তো গ্রামে কখনও যায়নি, দেখেনি গ্রামের অবস্থা। আমাদের দারিদ্র্যের হার গ্রামে হ্রাস পেয়েছে। শহরে হয়তো কিছুটা আছে। গ্রামের মানুষের কষ্ট তেমন নেই।
সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে বাজেট দিয়েছি
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণের উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেই আমরা বাজেট দিয়েছি। আমদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে স্বাবলম্বী করা। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পর মুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে থাকতে চাই।
তিনি বলেন, এত বাধা, এত প্রতিরোধ, এত সমালোচনা, এতকিছু হচ্ছে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেই জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ এতদিনে অনেক দূর, অনেক উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে পারতো। তবে আমি বলবো এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময় সময় সমস্যা তো আসেই। এটা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না, এটা মোকাবিলা করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ছিল
কোভিডের সময় আমরা অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। পরবর্তী হিসাবে আমরা যথাযথ হিসাব পাবো।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং যুদ্ধজনিত মুদ্রাস্ফীতি তারই প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপরে। কিছুটা আমাদের প্রবৃদ্ধি কমলেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ছিল। আমরা যথেষ্ট ভালো স্থানেই আছি। আমরা অর্থনৈতিক নীতি ও কার্যক্রমে একটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। ধারাবাহিকতায় গত সাড়ে ১৪ বছরে এ অর্জন, এটা কিন্তু চট করে লাফ দিয়ে পড়িনি। আমরা ধীরে ধীরে অর্জনটা করতে সক্ষম হয়েছি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। টাকার মান কমে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। আমাদের প্রচেষ্টা করেছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার।
মূল্যস্ফীতি প্রধান সমস্যা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার জনগণের সরকার। জনগণের কল্যাণই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে মূল্যস্ফীতিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি অর্থবছরে এবং আগামী অর্থবছরেও কৃচ্ছ্রসাধন করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। কারণ এটার প্রয়োজন হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে চালের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ডিজেলের মূল্য কমাতে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলাবাজারে বিক্রির জন্য এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। কোনও মানুষ যেন খাদ্যে কষ্ট না পায় সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।
সরকারি চাকরিজীবীবের বেতন বৃদ্ধি
সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ বেতন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মচারী যারা আছেন তাদের বিশেষ বেতন হিসাবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ এই আপৎকালীন সময়ে প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আশা করি এ বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতন বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের দেবো।
গণভবন এখন খামারবাড়ি
এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার আহ্বানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশবাসী প্রত্যেকেই তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করেছেন। আমি নিজেও করছি। গণভবন এখন প্রায় খামারবাড়ি।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সরকারি ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ উন্নীত করতে হয়। সংশোধিত বাজেটে তা ২ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করতে হয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে
তিনি বলেন, ভর্তুকি ব্যয় কমানোর জন্য ইতোমধ্যে জ্বালানির মূল্য সামঞ্জস্য করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কাজেই এটা আমাদের করতেই হবে সময়ে সময়ে। জ্বালানি খাতে ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয় স্থায়ী পদ্ধতি নির্ধারণে পথনকশাও আমরা তৈরি করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনও কারণে নেই। আমাদের মোট ঋণ আন্তর্জাতিক টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনার মাপকাঠির বেশ নিচেই রয়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরাময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গৃহস্থালি কাজকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হিসাবে নেওয়া
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসারে নারীরা যে কাজ করেন এটা কিন্তু বিরাট কর্মক্ষেত্র। এটা কিন্তু হিসাবে নেওয়া হয় না। এটা হিসাবে নেওয়া হলে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক অগ্রগামী হতো। সেটা বাদ রেখে হিসাব হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে বলবো আগামীতে যেন গৃহস্থালি কাজকেও হিসেবে নেন। কারণ সেখানেও কিন্তু নারীরা উৎপাদনমুখী কাজ করেন।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ তো দিতে হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু দিন আগে বিদ্যুতের একটা অভাব ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এমনকি কয়লা, এলএনজি বা তেল পাওয়াও যাচ্ছিল না। যা হোক সেটা থেকে আমরা মুক্ত হচ্ছি। সবাইকে এটাই বলবো বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ সেটা তো সবাইকে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে আর কত ভর্তুকি আমরা দেবো। সেটাই আমাদের প্রশ্ন। কাজেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হবেন সেই আহ্বান জানাই।
রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে
তিনি বলেন, আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করবো। আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি। আমরা পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। আত্মমর্যাদাশীল হতে চাই। এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে বলেও মনে করে শেখ হাসিনা।
বিদ্যমান কাস্টমস আইনকে আরও বেশি যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।