মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » হঠাৎ নয়, রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি: রাষ্ট্রপতি
হঠাৎ নয়, রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি: রাষ্ট্রপতি
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, হঠাৎ করে বঙ্গভবনে চলে যাইনি। রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। পাবনার ইন্দিরাপট্টি থেকে পাবনা টাউন হলের সভা থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। পাবনার আব্দুল হামিদ রোড থেকে আন্দোলন শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্পর্শ পেয়েছি। তিনি আমাকে নাম ধরে ডাকতেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেল খেটেছি, পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে আমাকে। রাজনীতির প্রতিটি ধাপ পেরিয়েই বঙ্গভবনে গিয়েছি।
মঙ্গলবার বিকালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক সংবর্ধনার শুরুতেই রাষ্ট্রপতির হাতে ফুল, ক্রেস্ট ও পাবনার প্রতীকী চাবি তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় নিজেদের সন্তান এবং দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতিকে এক নজর দেখতে নাগরিক সংবর্ধনার জনস্রোত এডওয়ার্ড কলেজের সংবর্ধনা স্থল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে।
উৎসবমুখর পরিবেশে এবং শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় ঘরের সন্তান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে বরণ করেছেন পাবনাবাসী। এক বিশাল জনসমুদ্রে রাষ্ট্রপতিকে সম্মানিত করেছেন নাগরিক সংবর্ধনায়।
পাবনাবাসী বলছেন, দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে মো. সাহাবুদ্দিন তাদের গর্বিত করেছেন। পাবনাবাসী আশা করছেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের হাত ধরে এগিয়ে যাবে পাবনা। রাষ্ট্রপতিও পাবনার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে চান। একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে তিনি বড় ভূমিকা রাখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
পাবনায় চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকালে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম।
নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্রের অস্তিত্বের প্রয়োজনে আগামী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। তাই অস্তিত্বের প্রয়োজনে সব কিছু বিচার করতে হবে। জনগণের উচিত হবে নির্বাচনে বিবেক দিয়ে বিচার করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা। এ সরকার গত ১৪ বছরে কী করেছে দেশের জন্য তা সবার বিবেচনায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় যা বলেছি তা পালন করব।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, এ দেশের সংবিধান বহুবার ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে। পাকিস্তানি ধারায় প্রবর্তন করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এটা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর করা হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। অবশেষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বেছে নিয়েছে জনগণ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গত ১৪ বছর ধরে দেশে যে উন্নয়নের ধারা বইছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে এখন দরিদ্রতা কমছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, শিক্ষিতের হার বেড়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। দেশে কোনো হাহাকার নেই।
রাষ্ট্রপতি পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডনে তার ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দুদকের কমিশনার থাকাকালে তিনি তার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। কিভাবে দেশের ভাবমূর্তিকে সমুজ্জ্বল রেখেছিলেন তা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, পাবনার সন্তান হিসেবে সেদিন ওই কাজটি করে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করেছিলাম।
রাষ্ট্রপতি সংবর্ধনার প্রতিক্রিয়ায় আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আপনারা যে ভালোবাসা দিলেন- তা কখনো শোধ করতে পারব না। মানুষ যেভাবে কাজ কর্ম ফেলে রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করছে তা আমার সারাজীবন মনে থাকেবে।
এ সময় তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে পাবনা-ঢাকা সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস চালু হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু ঈশ্বরদী-নগরবাড়ি রেললাইন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি থমকে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেটি চালু করলেও শুধুমাত্র ঢারারচর-পাবনা-রাজশাহী সার্ভিস চালু হয়। দীর্ঘদিন ধরে পাবনাবাসী সরাসরি পাবনা-ঢাকা রেল সার্ভিসের জন্য দাবি করে আসছিল।
নাগরিক সংবর্ধনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবীর এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, সংরক্ষিত আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবিপ্রবির উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. হাফিজা খাতুন, নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক ও মাছরাঙ্গা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, সদস্য সচিব ও রাষ্ট্রপতির আরেক ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু প্রফেসর শিবজিত নাগ, আব্দুল মতীন খান, ড. আব্দুল আলীম প্রমুখ।
এর আগে সকালে তিনি পাবনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, কোনো সমাজ ব্যবস্থা ধার করে চলে না। মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমি সব সময় ত্যাগের রাজনীতি করেছি, কখনও ভোগের রাজনীতি করিনি।
তিনি বলেন, অনেক মতবাদ দেখেছি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি মুজিবাদর্শ বা মুজিববাদের ওপর বিশ্বাস করেই। তখন কোনো মতবাদই কাজে লাগেনি। একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তাধারাই কাজে লেগেছে। তার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি এবং দেশ স্বাধীন করেছি।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য। স্বাধীনতা উত্তরকালে তিনি দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন এবং সে সময় পাবনা প্রেস ক্লাবের সদস্য হন। পরে তাকে আজীবন সদস্য করা হয়। এ প্রেস ক্লাবে তার অনেক কন্ট্রিবিউশন রয়েছে।
নিজের ছাত্র রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে ওই সময়ের অনেক গুণী সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। নিজের সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, অনেক গৌরবোজ্জ্বল দিন এই প্রেস ক্লাবে অতিবাহিত করেছি। বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ৭০ থেকে ৭৫ জনকে চাকরি দিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিদান নিইনি। আমি সব সময় ত্যাগের রাজনীতি করেছি, কখনও ভোগের রাজনীতি করিনি।
পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শিবজিত নাগ, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি এবং সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ প্রমুখ।
একই দিন সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনার বিসিক শিল্পনগরীতে ‘স্কয়ার লাইফ সায়েন্স লিমিটেডের’ ফলক উন্মোচন করেন। রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে এক দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের চার দিনের পাবনা সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নগরী পরিদর্শন করেন। সেখানে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী। পরে রাষ্ট্রপতি স্কয়ার লাইফ সায়েন্সেস লিমিটেডের উৎপাদন এলাকা পরিদর্শন করেন।
১৭ মে সকালে রাষ্ট্রপতি পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন ও শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করবেন। এরপর সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করে ১৮ মে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।