শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার ছয় প্রস্তাব
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার ছয় প্রস্তাব
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা: ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর কাছে সমুদ্র কূটনীতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহযোগিতা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করাসহ ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা শুরু হওয়া দুই দিনব্যপী ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
শুক্রবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই কনফারেন্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই অঞ্চলের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ ২৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সাগর-মহাসাগরসমূহের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে। সমুদ্রপথে প্রকৃত বাণিজ্য বিগত ১৫ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী দেশসমূহের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনা এখনও অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল তৈরি করেছি। এরই ধারাবাহিকতায়, আমি এই ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর কনফারেন্সে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ছয়টি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত: ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহকে তাদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমুদ্র কূটনীতি’ জোরালো করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: এই অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তদ্সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
তৃতীয়ত: একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমীহের ভিত্তিতে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।
চতুর্থ: ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরী পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করা হবে।
পঞ্চম: ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চর্চা এবং জনবান্ধব উন্নয়নের প্রসার করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, সমতাভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেক-নারীসম্প্রদায়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
ষষ্ঠ: উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রসার করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরেও সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
করোনাভাইরাস-পরবর্তী অবস্থা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এবারের কনফারেন্সের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘পিস, প্রসপ্যারেটি অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফর আ রেসিলিয়েন্ট ফিউচার’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বদা সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং এ সীমার মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য টেরিটরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। এই আইনটি “সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২” ঘোষণার আট বছর আগে কার্যকর করা হয়েছিল, যখন বিশ্বসম্প্রদায়ের এ বিষয়ে সীমিত ধারণা ছিল।
তিনি বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আফ্রিকার অঞ্চলসমূহে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এ অঞ্চলে বাস করে এবং জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান ৬০ শতাংশ। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, এ অঞ্চলটি নানাবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সঙ্কটের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারিত্ব এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিতে হবে।
এর আগে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স হয়েছে পাঁচবার। ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরে, ২০১৭ সালে শ্রীলংকায়, ২০১৮ সালে ভিয়েতনামে, ২০১৯ সালে মালদ্বীপে এবং ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।