রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন হ্রাস, সরকারের সহযোগিতা জরুরি
দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন হ্রাস, সরকারের সহযোগিতা জরুরি
সম্পাদকীয়: ড.আরিফুর রহমান: দেশে শিল্পপণ্য উৎপাদনে বিপর্যয় সৃষ্টির বিষয়টি উদ্বেগজনক। বস্তুত গত প্রায় এক বছর যাবৎ শিল্প খাতের মৌলিক উপকরণ ডলার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকট; উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পপণ্য উৎপাদনের গতি অনেকটাই মন্থর হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ সামগ্রী, পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্য, অধাতু মিনারেলজাতীয় পণ্য, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্যসহ ২২টি খাতের মধ্যে ১৩টিতেই উৎপাদন কমেছে। তবে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ৯টি খাতে উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে শিল্পপণ্যের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ কমে গেছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, উৎপাদন কমার তালিকায় রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যেমন-খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ সামগ্রী, যেগুলো একদিকে দেশের মানুষ ভোগ করে থাকে, অন্যদিকে রপ্তানিও হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে এসব পণ্যের যেমন সংকট ও দাম বেড়েছে, তেমনি রপ্তানিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
বিদ্যমান বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি এবং ডলারের দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে; অন্যদিকে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় কমেছে বিক্রি। বলার অপেক্ষা রাখে না, দফায় দফায় জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ায় এ খাতে সংকট আরও তীব্র হয়েছে। বিষয়টি শিল্প খাতের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে, যা বলাই বাহুল্য। শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের মতে, সংকট দিন দিন যেভাবে প্রকট আকার ধারণ করছে, তাতে দক্ষতার সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করতে না পারলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বাড়বে।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এতে আশা করা যায় কিছু শিল্প অন্তত ভালো থাকবে এবং সেগুলোয় কর্মসংস্থানও হবে। এর বাইরে অন্যান্য শিল্পের বিষয়ে এখন টিকে থাকার নীতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে মন্দার আঘাত কম-এমন দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। বস্তুত এবারের সংকটের মূল কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক। এর মধ্যে ডলার সংকট এ সমস্যাকে আরও প্রকট করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রেমিট্যান্সের দিকে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন। সরকার অবশ্য প্রণোদনা প্রদানসহ নানা উপায়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বৈদেশিক শ্রমবাজারের পরিসর বৃদ্ধির পাশাপাশি হুন্ডির ব্যবহার কমাতে সক্ষম হলে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বিদ্যমান সংকট ভিন্নভাবে মোকাবিলা করায় সংগত কারণেই তারা রপ্তানি বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয়সহ ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হলে অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা যায়। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সংকট নিরসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।