শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা: কার্যক্রমটি চালুর বিষয়টি ইতিবাচক
হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা: কার্যক্রমটি চালুর বিষয়টি ইতিবাচক
সম্পাদকীয়: ড.আরিফুর রহমান: দেশের সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ কার্যক্রম চালুর বিষয়টি ইতিবাচক। এর ফলে চিকিৎসকরা হাসপাতালে বসেই ব্যক্তিগত চেম্বারের মতো রোগী দেখতে পারবেন। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বার’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১২টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ শুরু হতে যাচ্ছে। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ কার্যক্রমের আওতায় সরকারি হাসাপাতালের চিকিৎসকরা নির্ধারিত ডিউটি শেষে ওই হাসপাতালের নিজ চেম্বারে বসে ব্যক্তিগতভাবে রোগী দেখতে পারবেন। বিনিময়ে পাবেন নির্ধারিত ফি।
এ ব্যবস্থার আওতায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কনসালটেন্টরা নিজ নিজ হাসপাতালে বসে রোগী দেখবেন। এর ফলে রোগীরা বিকাল ৩টার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা তো পাবেনই; উপরন্তু রোগীর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে সেগুলোও সেখানে সম্পন্ন করা হবে।
এ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন-এটি ধরে নেওয়ার পরও আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত তা হলো, ব্যবস্থাটি চিকিৎসকরা আত্মস্থ করতে পারছেন কিনা। চিকিৎসকরা যদি আন্তরিক না হন, তারা যদি উদারভাবে নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকেন, তাহলে এটি আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হবে এবং কার্যক্রমটি ফলপ্রসূ হবে না।
দ্বিতীয়ত, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় অবকাঠামো বাড়লেও সেবার মান ও সক্ষমতা বাড়েনি; বিশেষ করে রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা অপর্যাপ্ত। তদুপরি সেখানে বিরাজ করছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কনসালটেন্টের ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষকে যদি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হয়, তাহলে এটি তাদের কাছে উপহাসের নামান্তর হবে।
দেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি প্রচুর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠলেও সেসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গ্রহণ ব্যয়বহুল, যা বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের অসুখে-বিসুখে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই ভরসা। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে যান। কাজেই এসব হাসপাতালে রোগীদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় যাতে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস ও পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকার যেভাবে চিন্তা করে বাস্তবে তার সঠিক প্রতিফলন ঘটে না। এর অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান নানা অসংগতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
প্রচলিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। এ অবস্থার অবসানে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিরাজমান অনিয়ম-অসংগতি দূর করার পাশাপাশি ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ কার্যক্রমের আওতায় সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সফল করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।