রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | জাতীয় | প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন » বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকালে গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এই মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩১ দশমিক ৫ কিমি. ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত।
ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহণের ক্ষমতা ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ)।
পাইপলাইন উদ্বোধনের পর উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দুটির মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই, যাতে ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে ১শটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হব। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একই সঙ্গে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই পাইপলাইন নির্মাণ করে দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইন নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ভারত সরকার এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব ছিল। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।
তিনি বলেন, পাবর্তীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।
দুই দেশের মানুষের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ, ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভারতের থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি আর বিদ্যুৎ খাতে উপআঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সমুদ্রসীমানার পাশাপাশি স্থলসীমানা নিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করতে পারায় ভারতের সব রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বর্ণিল সাজে পার্বতীপুর ডিপো, তেল এসেছে ২৩ লাখ লিটার : পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মৈত্রী পাইপলাইনের পার্বতীপুর ডিপো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
রাস্তার দু’ধারে শহর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ডিজিটাল ফেস্টুন ও ব্যানারে সজ্জিত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা।
পার্বতীপুর উপজেলা মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্স প্রদর্শনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অপারেশন ও পরিবহণ পরিচালক অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহাম্মেদ, করপোরেশনের বিপণন পরিচালক যুগ্মসচিব অনুপম বড়ুয়া, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আনসারি, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান, মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সালেহ্ ইকবাল, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালন ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল সোবহান, পাইপলাইন প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক (এমডি) টিপু সুলতান, জেলা প্রশাসক খালিদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহাম্মেদ, পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন।
জানা যায়, এই ডিপোতে ১২ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ২৩ লাখ লিটার তেল এসেছে।