রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » দ্রব্যমূল্যের চাপে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ, ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই
দ্রব্যমূল্যের চাপে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ, ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে খাবারে কাটছাঁট করা ছাড়াও কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ আবার কেউ আগের বাসা ছেড়ে কম ভাড়ায় ছোটো বাসায় উঠছেন৷
নাজমুল হক তপন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন৷ বেতন পান ৫২ হাজার টাকা৷ তিন সদস্যের পরিবার তার৷ মেয়েটি এইএচএসসির ছাত্রী৷ তার কথা, ‘‘এখন আর সংসার চলছে না৷ গত চার বছরে বেতন বাড়েনি৷ কিন্তু খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ৷ আসলে জোর করে এখন জীবন চালচ্ছি৷ সেই মুড়ির টিন বাসের মতো৷ রাস্তায় চলাচলের কোনো অবস্থাই নাই৷ তাই ‘আল্লাহর নামে চলিলাম’ বলে জোর করে চালানো হচ্ছে৷ জীবন এখন মুড়ির টিন বাসের মত৷”
তিনি বলেন, ‘‘আগে মাসে একবার গরুর মাংস খেতাম৷ এখন তিন মাসে একবার খাই৷ দুধের খরচ বাঁচাতে দুধের চা খাওয়া বাদ দিয়েছি, রং চা খাই৷ গেস্ট আসলে শুধু দুধ চাই দেই৷ বাসায় অতিথি আসলে আরো কষ্ট বেড়ে যায়৷ এখন শাক-সবজি দিয়েই চলছে৷ খাবার পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছি৷ আর আগের বাসা পরিবর্তন করে মেয়ের স্কুলের কাছে ছোট বাসা নিয়েছি৷ তাতে বাসা ভাড়াও কম লাগছে আর স্কুলে যাওয়ার খরচও বেঁচে যাচ্ছে৷ তবে যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে সামনের বছর মেয়েটিকে পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করতে পারলে তাকে হোস্টেলে দিয়ে দেব৷ আর আমরা স্বামী-স্ত্রী এক রুমের একটি বাসা নিয়ে থাকবো৷ তা না হলে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হবে৷
একই ধরনের কথা বলেন রফিক রাফি নামে আরেকজন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ৩০ হাজার টাকা বেতন৷ চারজনের সংসার৷ বাসা ভাড়া লাগে না৷ নিজেদের বাসায় থাকি৷ কিন্তু ওই বেতনে প্রতিমাসেই ধারদেনা করতে হয়৷”
ঢাকায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে সহকারি শিক্ষক সালমা বেগম৷ তিনি ও তার স্বামীর মিলিয়ে তাদের মোট মোট বেতন ৭২ হাজার টাকা৷ সালমা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের তিনজনের সংসার৷ শ্বশুর বাড়িতেও টাকা দিতে হয়৷ সব মিলিয়ে আমাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে৷ করোনার সময় থেকে ঋণ নেয়া শুরু করি৷ সেই ঋণ এখনো শোধ করছি৷ নতুন করে ঋণ নিয়ে কীভাবে শোধ করবো? তাই নানাভাবে সংসারের খরচ কমানোর চেষ্টা করছি৷”
তিনি বলেন, ‘‘গত তিন মাসে যা অবস্থা সব কিছুর দাম ১০ থেকে ৩০ ভাগ বেড়ে গেছে৷ প্রতিদিনই বাড়ছে৷ তাই মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছি৷ নতুন পোশাকও কিনছি না৷ তারপরও সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে৷”
রংপুরের গফুর মিয়া এক বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন রিকশা চালাতে; কিন্তু টিকতে না পেরে আবার গ্রামে ফিরে গেছেন৷ তিনি জানান, ঢাকায় এসে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তিন মাস পর বউ ছেলে-মেয়েকে গ্রামের বাড়ি পাঠাই৷ এরপর একা থেকে অনেক কষ্ট করে ঋণ শোধ করে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি৷ এই বাজারে ঢাকায় টিকে থাকা সম্ভব ছিলো না৷”
গত অক্টোবরে সিপিডি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা৷ মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা৷ এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা৷ প্রচলিত ১৯টি খাবারের ওপর ভিত্তি করে তারা এই তথ্য তখন দেয়৷
সিপিডির গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালেও একজনের উপার্জন দিয়ে চারজনের একটি পরিবার ১৭ হাজার ৫৩০ টাকায় চলতে পারতো৷ তখন মাছ-মাংস বাদ দিলে ওই পরিবারের খাবার খরচ হতো ৬ হাজার ৫৪১ টাকা৷
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘সিপিডির ওই হিসাব আরো সাত-আট মাস আগের৷ এখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷ আমাদের বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি ১৫ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে৷ যদিও সরকারের হিসাবে তা কম৷”
তার কথা, ‘‘যা পরিস্থিতি তাতে অনেকেই খাদ্য তালিকা কাটছাঁট করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না৷ অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন৷ নতুন করে ঋণ নিয়ে তারা শোধ করবেন কীভাবে? তাই একটি অংশ স্ত্রী সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ আগের বাসা ছেড়ে কম ভাড়ায় ছোট বাসায় উঠেছেন৷ পরিবহণ ভাড়া কুলাতে না পেরে অনেকে এখন পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন৷”
তিনি বলেন, ‘‘এখন খাদ্য কম কেনায়, প্রয়োজনীয় খাবার না খাওয়ায় একটি অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে৷”
বিবিএস রবিবার যে মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাব প্রকাশ করেছে তাতে মূল্যস্ফীতি আবারো বেড়েছে৷ ফেব্রুয়ারিতে ৮.৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে৷ যা জানুয়ারি মাসে ছিলো ৮.৫৭ শতাংশ৷ তবে গত বছরের আগস্টে এই হার ছিল ৯.৫২ শতাংশ৷ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম বলেছেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি বাড়লেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হবে না৷”