রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | সম্পাদকীয় » দুর্নীতির টাকা উদ্ধারে সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে
দুর্নীতির টাকা উদ্ধারে সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে
ড.আরিফুর রহমান: দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া সরকারি অর্থের ৪৭ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয় কর্তৃক উদ্ধারের বিষয়টি ইতিবাচক।
জানা গেছে, ১৩ অর্থবছর ধরে দ্বিপক্ষীয়-ত্রিপক্ষীয়, পিএ কমিটির সভা, বিভাগীয় ও দুদকের মামলার মাধ্যমে ব্যাংক খাত, জ্বালানি খাত, সামাজিক নিরাপত্তা খাত, বিদ্যুৎ, টেলিকম, সরকারি চাকরিজীবী ও রাজস্ব খাতসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুল অঙ্কের এ টাকা উদ্ধারের পর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর সরকার ঘোষিত বাজেটের যে অর্থ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা ব্যয় করে থাকে, সেখানে নিরীক্ষার মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতি শনাক্ত করে থাকে সিএজি কার্যালয়। সাধারণত অনিয়ম ধরার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে সিএজি। এ বৈঠকে সমাধান না মিললে সিএজি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও সমাধান না হলে তা অডিট রিপোর্ট আকারে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। এরপর সেগুলো জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। সেখান থেকে নিষ্পত্তির জন্য চলে যায় সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির (পিএ) কাছে। সেখানে আলোচনায় যদি আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি না হয়, তখন বিভাগীয় মামলা হয়। এর বাইরে সরাসরি দুর্নীতি ঘটে এমন বিষয় যেমন-দরপত্র ব্যাতিরেকে কার্যাদেশ দেওয়া, ভ্যাট ফাঁকি প্রভৃতির ক্ষেত্রে তা পাঠানো হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে। এক্ষেত্রে দুদকসংশ্লিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলার পর আদালতের রায় নিয়ে টাকা উদ্ধারের কাজটি করে থাকে।
দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট হওয়া সরকারি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় কাজ। তবে বর্তমানে এক্ষেত্রে সরকারি মোট ব্যয়ের মাত্র ৭ শতাংশের ওপর অডিট করা সম্ভব হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও সক্ষমতার অভাবে বাকি ৯৩ শতাংশ ব্যয় অডিটের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশের ওপর অডিট করা উচিত। আমাদের দেশে এমনটি করা সম্ভব হলে অনিয়মের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়ার পাশাপাশি উদ্ধারকৃত অর্থের পরিমাণও যে অনেক বেশি হবে, তা বলাই বাহুল্য। উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিবছর যে অঙ্কের অডিট আপত্তি হয়, সে তুলনায় অর্থ আদায় বা ফেরত আনার অঙ্ক নেহায়েতই কম। এক্ষেত্রে অডিট আপত্তিগুলো প্রতিবেদনে উঠে আসার পর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কেন বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
দেশে নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি-অনিয়ম সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কাজেই দুর্নীতির বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি লোপাট হওয়া সরকারি অর্থ উদ্ধারে সিএজির সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।