মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » আওয়ামী লীগ সরকার আরেকটি মাইলফলক মেট্রোরেল
আওয়ামী লীগ সরকার আরেকটি মাইলফলক মেট্রোরেল
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেক ঢাকাঃ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পালে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি পালক। আরেকটি মাইলফলক দেখার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মেট্রারেল যুগে প্রবেশ করবে দেশ।মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরদিন থেকে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী চলাচল শুরু হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
উত্তরার দিয়াবাড়ী মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে টিকিট কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম যাত্রী হিসাবে মেট্রোরেলে উঠবেন। এরপর স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়ে তিনি আগারগাঁওয়ে নামবেন। মেট্রোরেল চালু হলে মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বাচবে সময় বাঁচবে, হবে অর্থের সাশ্রয়।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মেট্রোরেলগুলোর একটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই মেট্রোরেল।
প্রথম দিকে স্থায়ী ও একক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) টিকিট বা কার্ড মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই কিনতে হবে, যা বাইরে পাওয়া যাবে না। ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। এই কার্ডে যাতায়াতের জন্য টাকা ভরানো (রিচার্জ) যাবে। অন্যদিকে এক যাত্রার কার্ড নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে নিতে হবে। ট্রেন থেকে নামার সময় তা রেখে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরেও মেট্রোরেলের কার্ড বিক্রির জন্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং তার পর কমলাপুর পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। অন্যদিকে, উত্তরা নর্থ স্টেশন হতে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত হবে ২০ কিলোমিটারে দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা। প্রথম দিকে সপ্তাহে এক দিন মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল।
এদিকে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা দেবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি পুলিশ। এই নামে পুলিশের বিশেষ একটি ইউনিট গঠনের কথা রয়েছে। তবে এখনো ইউনিটটি গঠিত হয়নি। খুব শিগগিরই এমআরটি পুলিশ গঠন করা হবে।যাত্রীদের অভ্যস্ত করাতে শুরুর দিকে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ওঠানামার জন্য ১০ মিনিট করে থামবে। ১৫দিন পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্টেশনে ট্রেনগুলো ২ থেকে ৩ মিনিটের মতো সময় দেয় যাত্রীদের ওঠানামার জন্য। জনগণ অভ্যস্ত হয়ে গেলে বাংলাদেশে সেই একই রকম প্র্যাকটিস চালু হবে। প্রথম কিছু দিন চালানোর জন্য ১২ সেট ট্রেন প্রস্তুত রাখা হয়েছে দিয়াবাড়ীর ডিপোতে।ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুরুতে মাঝের কোনো স্টেশনে থামবে না মেট্রোরেল। সরাসরি দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে রেলকোচ। আপাতত প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা হিসাবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। এরপর ধীরে ধীরে ট্রেন চলার সময়সীমা বাড়ানো হবে। তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে ডিএমটিসিএল।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংশ্লিষ্টদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটি, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, মেট্রোরেল উদ্বোধনের ভেন্যু বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পরিবর্তে উত্তরার দিয়াবাড়ী মাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উদ্বোধনের দুটি স্পটের কথা আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। খোলা মাঠে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করায় দিয়াবাড়ী মাঠকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে ট্রেনের প্রথম যাত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি টিকিট কেটে উত্তরার উত্তর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে আগারগাঁও এসে নামবেন।
ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনী দিনে শুরু ও শেষের স্টেশন খুলে দেওয়া হবে। স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাউন্টার। তিন তলায় প্ল্যাটফরম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরা ওই তলায় যেতে পারবেন। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি কোচ। এতে ৫৪ জন বসতে পারবেন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে মূল কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়া মেট্রোরেল লাইন-১ এর মূল কাজও শুরু হবে এ মাসেই।