বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | রাজনীতি | শিরোনাম » শেখ হাসিনার বিকল্প নেই
শেখ হাসিনার বিকল্প নেই
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ নেতৃত্বগুণ আর তুমুল জনপ্রিয়তায়, দলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তাই আসছে সম্মেলনেও অপরিহার্য থাকছেন তিনি। তবে গত দুটি সম্মেলনে পরিবর্তন না আসা সাধারণ সম্পাদক পদে কে নেতৃত্বে আসছেন, সেটি পরিণত হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মূল আলোচনায়। এই পদে অন্তত হাফ ডজন নেতা আছেন নেতৃত্বের দৌড়ে।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। এই বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
দলীয় সূত্র বলছে, সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রতিবছর ডেলিগেট-কাউন্সিলররা দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার ক্ষমতায় দেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও কার্যনির্বাহী সংসদ ঠিক করবেন তিনি। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মেলনে কী চমক থাকছে, সেটি দেখার অপেক্ষা নেতাকর্মীরা।
নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সভাপতি আমাদের অপরিহার্য যিনি আছেন, তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। কাউন্সিলরদের এক জনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে তাকে (শেখ হাসিনা) সমর্থন করবে না। কাজেই এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।
‘সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেরই ইচ্ছা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আমার জানামতে দশ জন অন্তত প্রার্থী আছেন। যারা সাধারণ সম্পাদক হতে চায়। কাজেই, কে হবেন সেটা নেত্রীর ইচ্ছা। কাউন্সিল অধিবেশনে সেখানে কাউন্সিলরদের মতামতে এর প্রতিফলন ঘটবে। আমি এই মুহূর্তে কোনও প্রেডিকশনে যেতে পারি না। সময় এখনও ম্যাচিউর হয়নি।’দলীয় সূত্র এবং দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন তারা। চলমান বৈশ্বিক সংকট এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অভিজ্ঞ ও ব্যালেন্স কমিটি করতে পারেন তিনি। এতে খুব একটা রদবদল আসছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। পুরো কাযনির্বাহী সংসদ থেকে ৮-৯ জন বাদ পড়ে, সেসব পদে নতুনদের দেখা মিলতে পারে। সম্পাদকমণ্ডলীর দু’একজন পদোন্নতি পেতে পারেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দু’তিন জন বাদ পড়তে পারেন। আলোচনায় আছেন, আগের সম্মেলনে বাদ পড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের দু’এক জনকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। যুগ্ম সাধারণ পদ থেকে সভাপতিমণ্ডলীতে জায়গা পেরে পারেন দু’এক জন। এ ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।
এমন ইঙ্গিত দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের সম্মেলনে যে কমিটি হবে, সেখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা পরবর্তী সম্মেলনে, নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি। সেরকমও চিন্তা-ভাবনা আছে। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। আপাতত বড় ধরনের কোনও পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার সম্মেলনে খরচ কমিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারের সম্মেলনের বাজেট ধরা হয়েছে তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে সম্মেলনের বাজেট ছিল তিন কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিগত দিনে দু’দিনব্যাপী সম্মেলন হলেও এবার এক দিনে শেষ হবে।
জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এরিমধ্যে ডেলিগেটস ও কাউন্সিলররা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। বৈশ্বিক সংকটে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের এবার সম্মেলন সাদামাটা হলেও উচ্ছ্বাস এবং উৎসবের কোনও কমতি হবে না।
তিনি বলেন, এবার সম্মেলন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশবিরোধী অপশক্তি নানা অপপ্রচারে ব্যস্ত রয়েছে। এই অপশক্তিকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ রয়েছে সামনে। এসব বিবেচনা করে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী এই সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচিত করবেনঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন।
পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাকি দুটোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে।
পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকা আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। মূলমঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলিডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় প্রসঙ্গে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই একটি স্মার্ট দল। আওয়ামী লীগই সবসময় প্রথমে ভাবে, জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কী করতে হবে। আওয়ামী লীগের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হবে।
জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপকমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্য সচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও নেতাকর্মী কমবে না। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছেন ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এবারের সম্মেলনে সাদামাটা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল। জমা পড়া মতামত থেকে গুরুত্ব বিবেচনায় তা সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন আসছে না। ঘোষণাপত্রে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের বিষয়টি যুক্ত হবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধনের লক্ষে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজনের জন্য এ বছর বিদেশিদের দাওয়াত করা হচ্ছে না। তবে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে দাওয়াত করবে আওয়ামী লীগ।