শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » দেশে শিল্পে ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
দেশে শিল্পে ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
সম্পাদকীয়, ড.আরিফুর রহমানঃ ডলার সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন রপ্তানির অর্ডার কম আসায় কাঁচামাল আমদানির ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা কমে গেছে। আর যেসব উদ্যোক্তা ডলার আয় করেন না, তারা এখন কোনো এলসি খুলতে পারছেন না।
ডলারের অভাবে টাকায় শতভাগ মার্জিন দিয়েও এলসি খোলা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আমদানিনির্ভর শিল্পগুলো সংকটে পড়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। কারণ তাদের নির্ভর করতে হয় যেসব উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে কাঁচামাল আমদানি করেন, তাদের ওপর। তাদের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনে ছোট শিল্পগুলো নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কিন্তু এখন বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না।
এদিক থেকে রপ্তানিমুখী বড় শিল্পের অবস্থা কিছুটা ভালো। তাদের এখনো ডলারের সংস্থান রয়েছে। ফলে ভালো রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল আমদানিতে এখনো তেমন সমস্যা হচ্ছে না, যদিও আমদানি ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তাছাড়া শিল্প খাত নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের জোগান না পাওয়ায় তাদের উৎপাদন কমছে। সব মিলে দেশের শিল্প খাত চলছে একরকম বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্য দিয়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া দরকার। এতে আশা করা যায়, কিছু শিল্প অন্তত ভালো থাকবে এবং সেগুলোয় কর্মসংস্থানও হবে। এর বাইরে অন্যান্য শিল্পের বিষয়ে এখন টিকে থাকার নীতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে মন্দার আঘাত কম এমন দেশের প্রতি নজর দিতে হবে। বস্তুত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডলার সংকট নিরসনে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যেভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে, তাতে সেসব উদ্যোগের সুফল খুব বেশি মিলছে না। দেশে ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। এতে বৈধ পথে আয় বাড়বে।
বৈদেশিক শ্রমবাজারের পরিসর বৃদ্ধির পাশাপাশি হুন্ডির ব্যবহার কমাতে সক্ষম হলে ডলারের সংকট কাটতে পারে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনেক দেশই পড়েছে ডলার সংকটে, বিশেষ করে আমাদের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলো। তাই আমদানিনির্ভরতা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ডলার খরচের বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকেই সতর্ক হতে হবে।