শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | রাজনীতি | শিরোনাম » বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না বলে আবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন । তিনি বলেছেন, দেশের যে উন্নয়ন অগ্রগতি তা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।
শুক্রবার যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধির দেশ। অর্থনীতিকে গতিশীল করাই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্য যুবলীগকে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা ভাবে। উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সেটা সরকারে এসে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, এই ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বলেছিলেন। আমিও বিশ্বাস করি, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবেই গড়ে তুলব।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, উন্নয়ন প্রকল্প এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিএনপি সরকারে থাকতে উন্নয়ন না করে লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। আর এখন বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে রিজার্ভের টাকা ধার দেয়ায় দেশের টাকা দেশেই থেকেছে। সেই ধারের সুদ দেশই পেয়েছে, যাতে দেশের লাভ হয়েছে। এভাবে রিজার্ভের টাকা দেশ ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই চেয়েছিল দেশ শ্রীলংকা হবে, তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি, ইনশা আল্লাহ হবেও না। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবেও এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং এতিমের টাকা লোপাট করার মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না। সমালোচনাকারীরা যত কথাই বলুক, বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবেই গড়ে তুলব। ওই এইট পাস দিয়ে আর মেট্রিক ফেইল দিয়ে দেশ চললে সেই দেশের উন্নতি হয় না, সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি।’
শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদে যাতে যুবকরা জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে কাজ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা শ্রেণি উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করেও তা অস্বীকার করছে। ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি। রাস্তাঘাট পুল-ব্রিজের উন্নতি করে সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ১০০টা ব্রিজ একসঙ্গে উদ্বোধন করা… আমি জানি না ইতিহাসে কেউ করেছে কি না।’
শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নসহ প্রাথমিক স্কুলে আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা উপকরণ দেয়া, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাইটেক পার্ক তৈরি করা, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি, আইটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা জায়গায় মহিলা যুবকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার সুযোগ পাচ্ছে। এই সুযোগটা আওয়ামী লীগ না এলে জীবনেও হত না।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি কারও গিবত গাইতে আসিনি। আমি আমাদের তরুণ সমাজকে এইটুকু বলব, তরুণ সমাজেরই দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যুবলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে। জাতির পিতাকে স্বাধীনতার পর অনেকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কোনো সম্পদ নাই, কিছু নাই, আপনি কী দিয়ে দেশ গড়বেন? তিনি বলেছিলেন আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি-মানুষ দিয়েই আমি দেশ গড়ব। আজকে সেটা প্রমাণিত সত্য। দেশপ্রেম থাকলে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকলে এটা করা যায়। আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’
বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় যুবলীগকে এগিয়ে আসার আহবান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, বিশ্ব সংকট চলছে। যুব সমাজকে আমি বলছি সবাই যার যার জায়গায় থেকে সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করতে হবে। একটু জমিও যেন খালি না থাকে।
‘তরুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। আজকের যুবকদের দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) পাল্টা স্যাংশন। আমাদের আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের পরনির্ভনশীল থাকলে হবে না। আত্মনির্ভশীল হতে হবে। যুবকদের বলব, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। নিজের গ্রামে গিয়ে প্রতিটি জমিকে কাজে লাগাতে হবে। চাষ করতে হবে, যেটাই হোক’-বলেন তিনি।
সারাদেশে বিনাচাষে পড়ে থাকা জমিতে চাষাবাদের ব্যবস্থা নিতে যুবলীগকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনোদিন যাতে দুর্ভিক্ষ না হয়, সেজন্য সব জমিতে চাষ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের সঙ্গে যুবকরা যেন জড়াতে না পারে সেজন্য যুবলীগকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগ আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। যুবক থাকলে কাজ করার অনেক সুবিধা। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে যুবকদের সম্পৃক্ত করতে যুবলীগ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তরুণরাই পারে দেশকে গড়ে তুলতে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন নাকি তারা চোখেই দেখে না। এখন চোখ থাকতে যদি কেউ অন্ধ হয় তাহলে তো কিছু করার নেই। তারা উন্নয়ন চোখে দেখে না। অথচ ব্যবহার ঠিকই করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুফল তারা ভোগ করছে। বিএনপির আমলে তারা কী করেছে? তারা ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে, দেশের কোনো উন্নয়ন তারা করেনি। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে এসে হাজার হাজার নেতাকে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে হত্যা করেছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি কখনও কল্পনাও করতে পারেনি বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে। আজকে অনলাইনে কেনাকাটা হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। পরে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অনেক নেতা মানি লন্ডারিং, লুটপাট, দুর্নীতির কথা বলেন। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং মামলায় তিনি সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত। অস্ত্র মামলার আসামি। তাদের মুখে এ সমালোচনা মানায় না।
এর আগে দুপুর দুইটা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দুপুর দুইটা ৪০ মিনিটে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সমাবেশে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু হয় যুবলীগের। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সংগঠনটি পা রেখেছে ৫০ বছরে। ফজলুল হক মনি ছিলেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।