মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | শিরোনাম | সাবলিড » রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কিয়েভে পানির জন্য মানুষের হাহাকার
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কিয়েভে পানির জন্য মানুষের হাহাকার
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, রাজধানী শহরের ৪০ শতাংশ লোক এখন পানির সংকটে আছে এবং প্রায় পৌনে তিন লাখ পরিবারে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন হয়নি।
গতকালের হামলায় ইউক্রেনে ১৩ জন মানুষ আহত হয়েছেন।
রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা এবং জ্বালানি ব্যবস্থা ছিল তাদের হামলার লক্ষ্য, এবং সব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার বলেছেন, শনিবার বন্দর নগরী সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলা চালিয়ে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া ৪৫ থেকে ৫৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাসমূহ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণে তা বাকি বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেনি বলে জানাচ্ছে দেশটি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যতে আরো হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়ার আশংকা এড়াতেই এটি করা হয়েছে।
কিন্তু সোমবারের হামলার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে সবখানে। কয়েকটি অঞ্চলে এখনো বিদ্যুতের সংযোগ ফেরেনি।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিদ্যুৎ ব্যবহারে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ‘অত্যন্ত মিতব্যয়ী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কিয়েভে সড়কের বাতিগুলো নিভিয়ে রাখা হয়েছে, এবং ট্রলি বাসের পরিবর্তে প্রচলিত বাস সার্ভিস চালানো হচ্ছে।
বাড়িতে পানি না পেয়ে সড়কে থাকা পাম্পগুলো থেকে পানি সংগ্রহের জন্য হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
কিয়েভের ৮০ শতাংশ বাড়ি এখনো বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন।
সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মি. জেলেনস্কি বলেছেন, বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ স্থাপনের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ভিন্ন এক বার্তায় তিনি বলেছেন, “ইউক্রেনীয়দের বেঁচে থাকার ইচ্ছা মেরে ফেলার ক্ষেপণাস্ত্র নাই রাশিয়ার। ”
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য এলাকার মধ্যে রয়েছে লাভিভ, খারকিভ, জাপোরিশা এবং দনিপ্রপেট্রোভস্ক।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, মোট ১০টি অঞ্চলের ১৮টি স্থাপনা, যার বেশিরভাগই জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করেছে এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র মলদোভার একটি সীমান্ত শহরে গিয়ে পড়েছে।
মলদোভার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এতে সেখানকার বেশকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মলদোভা পরে বলেছে যে, চিসিনাউতে রুশ দূতাবাসের একজন কর্মীকে এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। যদিও ওই ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
সোমবারের হামলা
সোমবার সকালে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া থেকে অন্তত ৫০টি ক্রুজ মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়।
শনিবার বন্দর নগরী সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলা চালিয়ে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন অভিযোগের জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে শনিবারের হামলা নিয়ে ইউক্রেন কোন মন্তব্য করেনি।
এদিকে, সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চিত করেছেন যে এটি অংশত শনিবারের হামলার জবাব।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যবাহী জাহাজকে নিরাপদে চলাচলের নিশ্চয়তা দেয়া সংক্রান্ত একটি চুক্তি থেকে ‘রাশিয়া সাময়িক বিরতি দিয়েছে, কিন্তু বেরিয়ে যায়নি’ বলে জানিয়েছেন মি. পুতিন।
তবে সোমবার ইউক্রেন জানিয়েছে, খাদ্যবাহী জাহাজ বন্দর থেকে গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ হামলাকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কৌশল বলে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, শীতের আগে যখন তাপমাত্রা মাইনাস ২০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে যাচ্ছে, তখন দেশটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে, যাতে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের মনোবল ভেঙে দেয়া যায়।
ইউক্রেন বলেছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে দেশটির অনেক অঞ্চল রুশদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে, সেই সামরিক পরাজয়ের জবাব এর মাধ্যমে দিচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলছেন, এই রুশ হামলার পেছনের নায়ক ইউক্রেনে নিযুক্ত নতুন রুশ কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন, যাকে এই মাসের শুরুতে নিয়োগ দেয়া হয়।
গত সপ্তাহে রেজনিকভ বলেছিলেন, যে জেনারেল সুরোভিকিন, যিনি জেনারেল আরমাগেডন নামেও পরিচিত, তিনি আসার পর রুশ বাহিনী ‘তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে’।
তার অভিযোগ জেনারেল সুরোভিকিন “ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে নয়, বেসামরিক জনগণের সাথে প্রকাশ্যে যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া। ”
এই কৌশলকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
অনেক ইউক্রেনীয় বলেছেন যে তারা ভীত নন, যদিও তারা ক্ষুব্ধ যে বেসামরিক নাগরিকেরা আবারো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনসহ পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি বলেছেন যে জেনেভা কনভেনশন নামে পরিচিত যুদ্ধের ‘নিয়মকানুন’ সংজ্ঞায়িত করে যে চুক্তি তার ধারায় বেসামরিক অবকাঠামোতে ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে মস্কো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইউক্রেন বলছে, তাদের শহর রক্ষার জন্য আরও বেশি বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রয়োজন। জার্মানি ইতিমধ্যে অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে তারাও অস্ত্র পাঠাবে।