শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট: গভীর উদ্বেগজনক
আশরাফ আলীঃ আবাসিকের পাশাপাশি শিল্পকারখানায় তীব্র গ্যাস সংকটের সংবাদ গভীর উদ্বেগজনক। বস্তুত চলমান গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাগুলোর পণ্য উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে, যা মোটেই কাম্য নয়। জানা গেছে, দিনের বেশিরভাগ সময় লোডশেডিং ও গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় রপ্তানিমুখী পোশাক খাত নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গাজীপুর, সাভার ও কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতির শিকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন-গ্যাস পাইপলাইনের চাপ ৩ পিএসআই’র (প্রেশার পার স্কয়ার ইঞ্চি) নিচে নেমে যাওয়ায় দিনের বেলায় অধিকাংশ কারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদনে না থাকায় বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও নিটিং কারখানাগুলোয় সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য দিতে না পারায় ইতোমধ্যে শত শত কারখানার বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে; উপরন্তু সঠিক সময়ে পণ্য দিতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা অনেক রপ্তানিকারক ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা করছেন, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
গ্যাস হলো টেক্সটাইল শিল্প তথা স্পিনিং, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলের মূল জ্বালানি। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে এবং এর ফলে রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, যা অনভিপ্রেত। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকাকালীন গ্যাসের বিল বা জরিমানাও মওকুফ হয়নি।
এরপরও মালিকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন; কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। কর্তৃপক্ষ বারবার অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গ্যাস খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, এ কথা বলাই বাহুল্য। বছরখানেক আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে গ্যাস খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে বলেছিল-দেশে গ্যাসের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের বড় ধরনের ফারাক রয়েছে, যা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
গ্যাস সংকট নিরসনে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সরকার অবশ্য দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশীয় কূপ থেকে অন্তত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার পরিকল্পনার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে বাপেক্সের হাতে দীর্ঘমেয়াদি আরও বেশকিছু প্রকল্প রয়েছে।
এক্ষেত্রে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আবিষ্কারের লক্ষ্যে ত্রিমাত্রিক সার্ভে সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কূপ খনন করা হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার গ্যাস সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।