রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশে প্রশাসনে চলছে চিরুনী অভিযান,আসছে বড়সড় রদবদল
বাংলাদেশে প্রশাসনে চলছে চিরুনী অভিযান,আসছে বড়সড় রদবদল
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক,ঢাকাঃ দেশে প্রশাসনের শীর্ষ পদসহ বিভিন্ন স্তরে শিগিগর বড় ধরনের রদবদল করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসনের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন কঠোর ও সতর্কতা অবলম্বন করছে। রদবদল বা পদায়ন কিংবা নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতো তড়িঘড়ি নীতি পরিহার করে প্রত্যেক কর্মকর্তার বিষয়ে শীর্ষ পর্যায় থেকে খোঁজখবর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তা হাওয়া ভবনের সুপারিশে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, জ্বালানি, বিদ্যুত্, স্থানীয় সরকার, তথ্যের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ লাভ করেছিলেন তাদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অলিখিত ‘নীতি’ই ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পিএসের চিরকুট ছাড়া কাউকে ঐসব মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ করা যাবে না। এখন সেসব কর্মকর্তা সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন।
সূত্র বলছে, শূন্যতাজনিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের রদবদল করা হবে প্রশাসনে। চলতি মাস থেকে শুরু করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই রদবদল প্রক্রিয়া শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে ঐ সময়ে আলোচ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত থাকলে তাদেরকে কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়োগ বদলি ক্ষেত্রবিশেষ ‘সরকারবিরোধী রাজনৈতিক’ যোগাযোগ রক্ষার অভিযোগে অকালীন চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। এবারের নিয়োগ বদলির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, পারিবারিক আদর্শগত অবস্থান নিশ্চিত হয়েই তা করা হবে।
এদিকে সরকারের অধিকতর সতর্কতায় ২৮তম বিসিএস-এর কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতি ১০ দিনের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও তা অনুমোদন হয়নি। ইতিপূর্বে দেখা গেছে এসএসবির বৈঠক যেদিন হয়েছে সেদিনই সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে তা অনুমোদন নিয়ে আদেশ জারি হয়েছে। উপসচিবের পদোন্নতির অনুমোদন না পাওয়ায় যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির চূড়ান্ত সুপারিশের সারসংক্ষেপও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জনপ্রশাসন সূত্র জানায়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবসহ ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের শূন্য পদে আগামী ৩১ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে পূর্বের উদারতা এখন পরিহার করে চলছেন বলে দৃশ্যমান হয়েছে। কারণ নিচের কয়েকটি ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম-সচিব পদে দীর্ঘদিন কর্মরত।
এসব পদের নিয়োগের প্রক্রিয়ায় নড়চড় হতে পারে একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার, সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশু, উচ্চ শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, নৌপরিবহন, ধর্ম, ত্রাণ, খাদ্য ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদে পরিবর্তন আনা হতে পারে। পিএটিসির রেক্টর ও বিটিভির ডিজির পদেও পরিবর্তন আসবে। ডিজি সোহরাব হোসেন ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা। তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আনা হতে পারে।
সচিবের পদে পরিবর্তন ক্ষেত্রে ১১ ও ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারাই প্রাধান্য পাবেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে এই ব্যাচ থেকে ঠিক কতজনকে সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেওয়া সঙ্গত হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা আছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রের খবর।
প্রশাসনে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিসহ কর্মরত ৮৫ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ও স্পেশাল ব্যাচের একজন করে, ১৯৮৪ ব্যাচের পাঁচ জন, ১৯৮৫ ব্যাচের দুজন, ১৯৮৬ ব্যাচের ১২ জন, নবম ব্যাচের ১০ জন, দশম থেকে ২৫ জন এবং একাদশ ব্যাচের ২০ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ ১৩ জনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত। চলতি বছরের ১০ জন সচিবের পাশাপাশি আগামী বছর (২০২৩) অবসরে যাবেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরো ২৬ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আসছে ডিসেম্বরে। অক্টোবরে অবসরে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন। নভেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান অমিতাভ সরকার অবসরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ, বিপিএটিসির রেক্টর রামেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এম খলিলুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম সাইদুল ইসলাম মুকুল এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এম মোকাম্মেল হোসেন।
অন্যদিকে মাঠ প্রশাসন থেকেও ডিসি, ইউএনও পদেও পরিবর্তন আনা হবে। ইতিমধ্যে আদর্শগত দিক বিবেচনায় বেশকিছু ডিসি ও ইউএনও-এর বিষয়ে বিতর্ক উঠেছে প্রশাসনের অন্দরে। বলা হচ্ছে ডিসি, ইউএনও পর্যায়ে এমনকি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োজিতদের অনেকের ক্ষেত্রেই আদর্শগত দিক নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জনপ্রশাসন সূত্র বলছে আগামী মাস থেকে একজন একজন করে সকলের বিষয়ে খোঁজখবর করে কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।