দুর্নীতির মামলা ৫ বছরের জেল হতে পারে নেইমারের!
ড.আরিফুর রহমানঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ বৃদ্ধি: প্রত্যাবাসনের মধ্যেই সংকটের সমাধান, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, মাদকের কারবার, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে অন্তত অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এতে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায় প্রতিদিনই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনাখুনির মতো ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি উখিয়ার ১৮নং ক্যাম্পে সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর এলোপাতাড়িভাবে অতর্কিত গুলি ছুঁড়লে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত ও এক রোহিঙ্গা নারী গুলিবিদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের পর থেকে ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ১২০টিরও বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক বেশিরভাগ সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, ক্যাম্প অশান্ত করার জন্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে বিনামূল্যে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। মূলত বিশ্বের দরবারে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এসব করছে মিয়ানমার। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বস্তুত, নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুরু থেকেই বাংলাদেশের জন্য মূর্তিমান সমস্যা হিসাবে বিরাজ করছে। তাদের আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রমে স্থানীয়রা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে, যা মোটেই কাম্য নয়। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, উত্তরোত্তর সংকটের মাত্রা বাড়লেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনোরকম অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না; বরং আশ্রয় শিবিরগুলোকে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত করেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হলে সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে কয়েক দশকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে।
অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাসস্থান ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের একাংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে, যেখানে উন্নত বাসস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মধ্যেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের জরুরি সমাধানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিপুল ভোটে চতুর্থবারের মতো রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে, যার প্রতিপাদ্য হচ্ছে-বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান রয়েছে। উল্লেখ্য, ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে এ রেজুলেশন উত্থাপন করেছে, যাতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে ১০৪টি দেশ। এ রেজুলেশনের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গঠনমূলক একটি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, এটাই প্রত্যশা।