মহাসড়কে কেন মরণখেলা
আশরাফ আলী: আইনের প্রয়োগ ও শৃঙ্খলার অভাবে দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে বহুল আলোচিত সমস্যাগুলোর সমাধানে কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
বর্তমানে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যে, একজন যাত্রী ঘর থেকে বের হওয়ার পর ঘরে ফেরা পর্যন্ত স্বজনদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। সড়ক কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, সোমবার রাজধানীর গুলিস্তানের একটি দুর্ঘটনায় তা আবারও স্পষ্ট হলো।
চিকিৎসা নিতে বাসা থেকে বের হয়ে সেদিন দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হালিমা বেগমের। একটি বাসের ধাক্কায় সড়কে পড়ে যাওয়ার পরমুহূর্তের মধ্যেই আরেকটি বাস তাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুরের দিকে মারা যান তিনি। বস্তুত দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় এখন চলছে রীতিমতো মরণখেলা। একটি সংগঠনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে গত সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জন নিহত এবং ৭৯৪ জন আহত হয়েছেন।
নিহতদের ৩৫ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। উদ্বেগজনক হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে দর্শক বাড়াতেও চলছে গতির প্রতিযোগিতা। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ছাড়াও দূরপাল্লার বাসের চালক-হেলপারদের নামানো হচ্ছে এসব প্রতিযোগিতায়। রেসের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে একশ্রেণির তরুণ আর্থিকভাবে লাভবান হলেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন যাত্রীরা। এ ধরনের অরাজকতা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।
সড়ক-মহাসড়কগুলোয় বিশৃঙ্খলা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কয়েকদিন আগে ফরিদপুরে ঘটে যাওয়া চলন্ত বাসের ভেতর বিদ্যুতের আস্ত একটি খুঁটি ঢুকে যাওয়ার ঘটনা। দেশের সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি কঠিন। তবে সংশ্লিষ্টরা পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে আশা করা যায়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক ত্রুটিমুক্ত করতেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন অবশ্যই প্রয়োজন। তবে একই সঙ্গে জনগণকেও হতে হবে সচেতন।