বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে আরাকান আর্মি ও আরসার ঘাঁটি আছে, মিয়ানমারের অভিযোগ : ঢাকার প্রত্যাখ্যান
বাংলাদেশে আরাকান আর্মি ও আরসার ঘাঁটি আছে, মিয়ানমারের অভিযোগ : ঢাকার প্রত্যাখ্যান
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকাঃ মিয়ানমার অভিযোগ করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও আরসার ঘাঁটি বাংলাদেশে আছে । তবে বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে এত দিন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেলেও গতকাল মঙ্গলবার উখিয়া সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও প্রশিক্ষণ বিভাগের মহাপরিচালক জ ফিও উইন গত সোমবার সকালে নেপিডোতে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
সেখানে তিনি বলেন, আরাকান আর্মি ও আরসা মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালিয়েছে।
তাদের নিক্ষেপ করা গোলা বাংলাদেশে এসে পড়েছে।
মিয়ানমারের কর্মকর্তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে দেওয়া তথ্যের বিষয়ে উল্লেখ করেন। সেদিন মিয়ানমার বাংলাদেশকে কূটনৈতিক চ্যানেলে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে আরাকান আর্মি ও আরসার সদস্যদের ঘাঁটি ও পরিখা আছে। সেগুলো ধ্বংস করতে তিনি মিয়ানমারের আহ্বান পূনর্ব্যক্ত করেছে। মিয়ানমার গত সোমবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে এসংক্রান্ত একটি চিঠিও দিয়েছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং আরাকান আর্মি সম্পর্কে যে অভিযোগ করেছে, তাকে গতানুগতিক বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব খুরশেদ আলম। তিনি গতকাল বলেন, ‘এটি মিয়ানমারের আজকের কথা না। তারা প্রথম থেকে এ ধরনের কথা বলে আসছে। কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে বলেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নীতি সন্ত্রাসকে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়া। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। ’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘অন্য দেশের কোনো রকম বা কাউকেই বাংলাদেশে স্থান দিয়ে মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল করার অভিপ্রায় বাংলাদেশের কোনো দিনই ছিল না। এখনো নেই। ভবিষ্যতেও থাকবে না। ’
কূটনীতিকদের সীমান্ত পরিস্থিতি জানাল সরকার
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সরকার। ব্রিফিংয়ের পর ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব খুরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে, প্রাণহানি ঘটছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা প্রথমে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, মিয়ানমার থেকে কোনো গোলা যেন বাংলাদেশে না আসে। এরপর আসিয়ান সদস্য দেশগুলোকে আমরা একইভাবে অনুরোধ করেছি, তারা যেন প্রভাব খাটিয়ে মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশে না আসা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের জনগণের ওপর যেন চাপ সৃষ্টি না হয়। ’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, গতকাল অন্যান্য রাষ্ট্রদূতকেও তাঁরা একই বিষয় বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, পাঁচ বছর হয়ে গেল। একজন রোহিঙ্গাও ফেরত নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করিনি যার জন্য মিয়ানমারের গোলা এসে আমাদের সীমান্তে এসে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ব্যাহত করবে। ’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মিয়ানমার যাতে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে না পারে, সে জন্য ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশ বিদেশি দূতদের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাত চায় না। কারণ সংঘাত বাধলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার অজুহাত পাবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের উসকানিতে বাংলাদেশের পা না দেওয়ার প্রশংসা করেছেন কূটনীতিকরা।
এবার গোলাগুলি উখিয়া সীমান্তের ওপারে
কক্সবাজার থেকে বিশেষ প্রতিনিধি জানান, মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি থেমে নেই। গতকাল সকালে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমানপাড়া গ্রামের বিপরীতে নাফ নদের ওপারে গোলাগুলি শুরু হয়। এত দিন ধরে শুধু বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ২০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার কাছেই গোলাগুলি চলছিল।
গতকাল সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৩/৪৪ পিলারের জামছড়ি ও তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি শুরু হয়ে সকাল ১১টা পর্যন্ত চলে। দুপুর ২টার দিকে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মী দল তমব্রু সীমান্তের এপারের পাহাড় থেকে ভিডিও করার সময় ওপারের মিয়ানমারের বিজিপি চৌকি থেকে আকস্মিক ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয়। গণমাধ্যম দলটির এক কর্মী বলেন, ‘আমাদের ক্যামেরায় ছবি ও গোলাগুলির শব্দ ধারণ করা গেছে। ’