সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | রাজনীতি | শিরোনাম | সাবলিড » আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি পেলেন- এমপি পঙ্কজ দেবনাথ
আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি পেলেন- এমপি পঙ্কজ দেবনাথ
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ পঙ্কজ দেবনাথ। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনেক। ঘুরেফিরেই তাকে নিয়ে যত বিতর্ক-সমালোচনা। খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই। ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার পর আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বাদ পড়েন। আর এবার অব্যাহতিই পেলেন দলের সব পদ থেকে। অবশ্য কারণদর্শানোর জন্য সময়ও পেলেন ১৫ দিন।
পঙ্কজ দেবনাথ বরিশাল-৪ আসনের (মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, কাজীরহাট) সংসদ সদস্য। বরিশাল জেলা শাখা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত অব্যাহতির চিঠিতে বলা হয়েছে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ’। তবে আরও আরও অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা নেতাকর্মীদের।
কী অভিযোগ সেসব?
পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার পর ১৭ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা পঙ্কজ দেবনাথকে সংগঠনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপরও থেমে থাকেননি পঙ্কজ দেবনাথ, বিতর্কই তার নিত্যসঙ্গী। ঘুরেফিরেই বিভিন্ন বিশৃঙ্খল কর্মে আলোচনায় তিনি। ভালো কর্মের মাধ্যমে না পারলেও বিতর্ক জন্ম দিয়ে মাঝেমধ্যেই আলোচনায় থাকছেন।
ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকায় তার নাম উঠে আসে। এক-এগারোর পাঁচজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকায় নাম এসেছিল তার। অনিয়ম-দুর্নীতি, নৈরাজ্য, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি, দখল সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, জমি দখল এবং অবৈধভাবে অর্থ সম্পদ অর্জনসহ তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীদেরই।
অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ আগস্ট বিচারিক আদালত তৎকালীন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ ও তার স্ত্রীকে পৃথক মেয়াদে সাজা দেন। এর মধ্যে পঙ্কজ দেবনাথকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি তার স্ত্রী মনিকা দেবনাথকে তিন বছর করে মোট ৬ বছরের কারাদণ্ডসহ ২ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে অবশ্য মামলা থেকে খালাস পান পঙ্কজ।
বরিশালে দলের মধ্যে গ্রুপিং ও নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত এই নেতা নির্বাচনী এলাকায় নৌকার বিপরীতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া ও নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগসাজস করে দলীয় নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের। নিজস্ব সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য সঞ্জয় চন্দ্রকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে এমপি পঙ্কজ দেবনাথসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
বরিশালের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, পঙ্কজ নাথের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানাপোড়েন চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময় কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে।
তারা জানান, পঙ্কজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সর্বশেষ ২৮ আগস্ট পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারীরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে আহত করেন। আহত নেতাকর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হলে সেখানেও তাদের ওপর হামলা করা হয়।
পঙ্কজ দেবনাথের খবরদারি, জুলুম, অন্যায় ও অত্যাচারের কারণে এলাকায় দলের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। তার অপকর্মের জন্য এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাবমূর্তি সংকট দেখা দিচ্ছে। শুধু তিনি একা নন, তার অনুপস্থিতিতে তার ছোট ভাই মনোজ নাথ, চাচাতো ভাই রামকৃষ্ণ নাথ, ভাগ্নে রিপন নাথের ইশারায় চলে প্রশাসনের অবৈধ বাণিজ্য ও লুটপাট।
দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যাপারে পঙ্কজ দেবনাথ ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি। আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এই চিঠি আমিও পেয়েছি। কিন্তু কেন দিয়েছে তা আমি জানি না। জানার চেষ্টা করছি।
দলের মধ্যে থেকে আপনি নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা করে হয়রানি করেছেন এমন অভিযোগ আছে। এ কারণে কি আপনাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ— এমন প্রশ্নে তিনি কিছু সময় চুপ থেকে বলেন, আসলে এই বিষয়ে কী বলব। কী কারণে আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আমি নিজেও জানি না। খোঁজ নিতে হবে।