রবিবার, ২৮ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » জাতিসংঘের পারমাণবিক নিরাপত্তা চুক্তির বিরুদ্ধে- রাশিয়া
জাতিসংঘের পারমাণবিক নিরাপত্তা চুক্তির বিরুদ্ধে- রাশিয়া
বিবিসি২৪নিউজ, ফরিদা ইয়াসমিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকেঃ জাতিসংঘ সম্মেলনে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছে রাশিয়া। পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি রয়েছে তাতে স্বাক্ষরকারী ১৯১টি দেশ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর চুক্তিটি পর্যালোচনা করে দেখে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে তা যথেষ্ট কিনা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সম্মেলনে চুক্তি পর্যালোচনার পর নতুন যে খসড়া বয়ান তৈরি করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পরমাণু কেন্দ্র, বিশেষ করে জাপোরিঝিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে চলা সামরিক তৎপরতা নিয়ে এতে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করা হয়েছে।
শেষবার এই চুক্তি পর্যালোচনা করা হয় ২০১৫ সালে এবং তখনও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তী পর্যালোচনা হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবছর নিউ ইয়র্কে। পয়লা অগাস্ট থেকে শুরু হয়ে চার সপ্তাহ ধরে এই সম্মেলন চলার পর একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিনিধি দেশগুলো।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং বলেছেন মতৈক্যে পৌঁছতে এই ব্যর্থতায় তিনি “গভীরভাবে আশাহত”।
তিনি বলেন, “অন্য সব দেশ চুক্তির প্রস্তাবিত বয়ান গ্রহণ করতে রাজি হলেও রাশিয়া আপোষ করতে রাজি না হওয়ায় এ ব্যাপারে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”
আমেরিকার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত বনি জেনকিন্স বলেছেন আমেরিকা “সম্মেলনের এই ফলাফলে গভীরভাবে দুঃখিত, বিশেষ করে যখন রাশিয়ার পদেক্ষেপের কারণেই আমরা এই সম্মেলনে বসেছি।”
রাশিয়ার আপত্তি কী নিয়ে?
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রসহ দেশটির বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর আশপাশে যে ধরনের সামরিক তৎপরতা চলছে তাতে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করে চুক্তির বয়ানের একটি বিশেষ অংশ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এই চুক্তি গ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে যুদ্ধের গোড়ার দিকেই রাশিয়া জাপোরিঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রটির দখল গ্রহণ করে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত,” তিনি আরও বলেছেন - অন্য কিছু দেশও এই বয়ানের সাথে একমত নয়।
এই চুক্তি গৃহীত হবার আগে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব দেশকে চূড়ান্ত দলিলটি অনুমোদন করতে হবে।
সম্মেলনে মতৈক্য না হওয়ায় অনেক দেশ হতাশা প্রকাশ করলেও নেদারল্যান্ডস বলেছে তারা “সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সন্তুষ্ট, তবে মতৈক্য না হওয়ায় খুবই হতাশ।”
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন চুক্তি নিয়ে মতৈক্য না হলেও এই প্রক্রিয়া “সকলের জন্য নিরাপত্তা মেনে চলার বিষয়টি চর্চ্চার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং এ ব্যাপারে বহুজাতিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ।”
জাতিসংঘ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি
নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল ১৯৭০ সালে, ১৯০টি দেশের সমর্থন নিয়ে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং চীন। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত কমাবে এবং অন্যান্য দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ হতে দেবে না।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ার পরমাণু কেন্দ্রটির সাথে দেশটির বিদ্যুত সঞ্চালন গ্রিডের সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে সম্ভাব্য তেজস্ক্রিয়তা বিপর্যয় এড়ানোর লক্ষ্যে।
এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। রাশিয়া মার্চের গোড়ার দিকে এই কেন্দ্রটির দখল নিয়েছে, তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এখনও এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন, যদিও তারা দাবি করছেন তাদের দায়িত্ব পালনে অসুবিধা হচ্ছে।
ইউক্রেনের পারমাণবিক সংস্থার কর্মকর্তারা শনিবার বলছেন গত ২৪ ঘন্টায় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চত্বরে রাশিয়া কয়েক দফা রকেট হামলা চালিয়েছে। বলা হচ্ছে, গোলার আঘাতে মূল স্থাপনার ক্ষতি যে হয়েছে তা নিশ্চিত।
হাইড্রোজেন নি:সরণ বা তেজস্ত্রিয় পদার্থ ছিটকে পড়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। রাশিয়া অবশ্য দাবি করছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরাই পারমাণবিক স্থাপনাটিতে হামলা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ আগামী কিছু দিনের মধ্যেই জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রটি পরিদর্শনে যাবেন বলে কথা রয়েছে।