বাংলাদেশে সমাপ্ত প্রকল্পের অতিরিক্ত গাড়ি বিলাস ব্যয়
সম্পাদকীয়; দেশে বিভিন্ন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত গাড়ি বিলাস এবং প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সময়মতো গাড়ি জমা না দেওয়ার বিষয়টি বহুল আলোচিত। বর্তমানে বিশ্বে একটি সংকট পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা মোকাবিলার অংশ হিসাবে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সময়েও শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোর গাড়ি নিয়ম মেনে জমা না দেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসাবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে-সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ কম ব্যয় করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, দফায় দফায় তাগিদ দিয়েও প্রকল্পের গাড়ির হিসাব নিতে পারছে না সরকার। ২০২১ সালের জানুয়ারি ও নভেম্বরে দুদফা তাগিদ দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি লিখেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পের গাড়িসংক্রান্ত কোনো তথ্য জমা পড়েনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ২০০৬ সালে প্রকল্পের গাড়ি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তৎকালীন সংস্থাপন (বর্তমানে জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সমাপ্ত প্রকল্পের হাজার হাজার গাড়ি নিয়ম মেনে জমা পড়ছে না। এতে অবৈধভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এসব গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের কোষাগার থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থের জ্বালানি তেল খরচ হচ্ছে। মূলত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই সরকারি অর্থ খরচের এত বড় অনিয়মের ঘটনা ঘটছে।
অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি, সমাপ্ত প্রকল্পের হদিসবিহীন গাড়ির খবর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হওয়ার পরই সেসব গাড়ির সন্ধান মিলেছে। তখন জানা গিয়েছিল, হদিসবিহীন গাড়িগুলোর মধ্যে বেশকিছু ছিল অকেজো, আর বাকিগুলো বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তির অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবহার করতেন। বস্তুত এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের নৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব অনিয়মের সঙ্গে যাদেরই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলবে, তাদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা না হলে অর্থ অপচয়ের এমন ঘটনা চলতেই থাকবে।
প্রশ্ন হলো, প্রকল্প শেষে গাড়ির অপব্যবহার রোধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে কেন? অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা দরকার। তাহলে বাকি সবাই পরিবহণ পুলে গাড়ি জমা দিতে শুরু করবেন। কেবল চিঠি চালাচালি করেই কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব শেষ করতে পারে কিনা, এটাও এক প্রশ্ন। বস্তুত সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা যেমন অপরাধ, তেমনি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ কেন এ ব্যাপারে উদাসীন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া এ ধরনের অনিয়মের অবসান হবে না। দুর্নীতি ও অনিয়মে যে বা যারাই যুক্ত থাকুক, কেউ যেন পার না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর না হলে সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসাবে যত পদক্ষেপই নিক, তার প্রকৃত সুফল মিলবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।