সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে: মিয়ানমারে চারজন গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সেনাবাহিনী
বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে: মিয়ানমারে চারজন গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সেনাবাহিনী
বিবিসি২৪নিউজ,এশিয়া ডেস্কঃ রাষ্ট্রীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে বলা হচ্ছে, চার জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে কারণ তারা “নিষ্ঠুর এবং অমানবিক সন্ত্রাসী তৎপরতার নির্দেশদাতা, আয়োজক এবং ষড়যন্ত্রকারী”। খবরেরাষ্ট্রীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে বলা হচ্ছে, চার জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে কারণ তারা “নিষ্ঠুর এবং অমানবিক সন্ত্রাসী তৎপরতার নির্দেশদাতা, আয়োজক এবং ষড়যন্ত্রকারী”। খবরে আরো বলা হয়, তাদেরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে আরো বলা হয়, তাদেরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চারজন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। দেশটিতে কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মত সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের ঘটনা ঘটলো বলে মনে করা হচ্ছে।
সাবেক আইনপ্রণেতা পিয়ো জেয়া দ, লেখক ও আন্দোলনকারী কো জিমি, হ্লা মিয়ো অং এবং অং থুরা জ-য়ের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী তৎপরতা’ চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল।
গত জুন মাসে সেনাবাহিনী তাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছিল।সামরিক জান্তা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি-র সরকারকে উৎখাত করে।ছায়া সরকারের নিন্দা
অভ্যুত্থানের পাল্টা প্রতিবাদ হিসেবে গঠিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) নামের ছায়া সরকার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে এ ঘটনায় তারা ‘মারাত্মক মর্মাহত ও দুঃখিত’।
এই ছায়া সরকারে রয়েছে গণতন্ত্রপন্থী ব্যক্তিত্ব, সশস্ত্র আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য এবং এনএলডির সদস্যরা।
তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলছে, “নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি সামরিক জান্তাকে শাস্তি দেয়া হোক”।রাষ্ট্রীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে বলা হচ্ছে, চার জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে কারণ তারা “নিষ্ঠুর এবং অমানবিক সন্ত্রাসী তৎপরতার নির্দেশদাতা, আয়োজক এবং ষড়যন্ত্রকারী”।
খবরে আরো বলা হয়, তাদেরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তবে তারা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় ও কীভাবে কার্যকর করা হয়েছে তা উল্লেখ করেনি।
ইয়াঙ্গনের কারাগারে পরিবারের সদস্যরা
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের পর দেশটিতে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল।
এর আগে দেশটিতে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।
বিবিসি বার্মিজ জানাচ্ছে, ওই চারজন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ইয়াঙ্গনের ইনসেইন কারাগারে অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করার জন্য।
পরিবারের হাতে এখনো মৃতদেহগুলি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি, বিবিসিকে বলেছেন কো জিমির বোন।
পিয়োর স্ত্রী তাজিন নিয়ান্ট অং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাকে তার স্বামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
পরিবারগুলো এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য জানার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে।এক রুদ্ধদ্বার আদালতে গত জানুয়ারি মাসে প্রথম এই চার ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
এই বিচার প্রক্রিয়াকে অন্যায় ও অস্বচ্ছ বলে অভিহিত করেছিল মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
এই চারজন সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
পিয়ো জেয়া দ এবং কো জিমি বলে পরিচিত চ মিন ইউ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন এবং জুন মাসে দেয়া আপিলের রায়ে তারা হেরে যান।
তিপ্পান্ন বছর বয়সী কো জিমি ৮৮ জেনারেশন স্টুডেন্টস গ্রুপ নামে একটি গোষ্ঠীর সদস্য। এরা মূলত মিয়ানমারের একটি গনতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারী গোষ্ঠী যারা ১৯৮৮ সালের এক সামরিক জান্তাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য সুপরিচিত।কো জিমি তার গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের জন্য ২০১২ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেছেন।
গত বছর অক্টোবর মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয় ইয়াঙ্গনের এক অ্যাপার্টমেন্টে অস্ত্র ও গোলাবারদে লুকিয়ে রাখা এবং ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের ‘উপদেষ্টায়’ পরিণত হবার অভিযোগে।একচল্লিশ বছর বয়সী পিও জেয়া দ ছিলেন এনএলডির একজন সাবেক আইনপ্রণেতা। তিনি সু চির একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন।
তিনি একজন সাবেক হিপহপ শিল্পী।
তিনি তার গানের কথা সেনাবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরার কারণে প্রায়ই সেনাবাহিনীর রোষের মুখে পড়তেন।
তাকে গত নভেম্বর মাসে সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
বাকী দুজন - হ্লা মিয়ো অং এবং অং থুরা জ’য়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।
তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে একজন নারীকে হত্যার অভিযোগে, যিনি সামরিক জান্তার তথ্যদাতা ছিলেন বলে মনে করা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনাকে ‘স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার অধিকার এবং ব্যক্তির নিরাপত্তার অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।অং সান সু চি গৃহবন্দী
স্থানীয় মিলিশিয়া, বিরোধী আন্দোলকারী এবং যারা অভ্যুত্থানবিরোধী মনোভাব পোষণ করে তাদের বিরুদ্ধে গত বছর থেকে অভিযান কঠোর করেছে সেনাবাহিনী।
যে নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছিল সু চির রাজনৈতিক দল সেটিকে কারচুপির নির্বাচন বলে মনে করে সেনাবাহিনী।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য সেনাবাহিনীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তাদের বক্তব্য কারচুপির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই অং সান সু চি গৃহবন্দী আছেন।
তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি থেকে শুরু রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন লঙ্ঘন পর্যন্ত।
এই অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে দেড়শ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে।
সেনাবাহিনীর হাতে নিহত, কারাবন্দী বা আটক ব্যক্তিদের হিসেব রাখে, এমন এক সংগঠন দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে ১৪,৮৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২১১৪ জন বলে একটা হিসেব পাওয়া যাচ্ছে।