রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » আমেরিকা | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ৪০ বছরের রেকর্ড
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ৪০ বছরের রেকর্ড
বিবিসি২৪নিউজ,মো.সুমন মিয়া : যুক্তরাষ্ট্র থেকেঃ যুক্তরাষ্ট্রে ভোগ্য পন্যের মূল্য সুচক গত এক বছর আগের চেয়ে ৯.১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত ৪০ বছরের মধ্যে ভোগ্য পন্যের মূল্য বৃদ্ধি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেছে। ৪০ বছর আগে এই মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮.৫ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো খাদ্যদ্রব্য, বাড়িভাড়া, গ্যাসের মূল্য হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি এবং এর ফলে আমেরিকানদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বাজেট সংকুচিত করতে হচ্ছে এবং তাতেও সামলে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে তারা। আমেরিকান শ্রম বিভাগ জানিয়েছে যে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি ইউক্রেন থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায়। তবে গত জুন মাসে গ্যালনপ্রতি লিড-মুক্ত জ্বালানি মূল্য ৫ ডলার থাকলেও গত সপ্তাহে সারাদেশে তা তা হ্রাস পেয়ে গড়ে প্রতি গ্যালন ৪.৬৫ ডলারে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যার পরিণতিতে ভোগ্যপন্যসহ যে কোনো পন্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
মূল্যস্ফীতি আমেরিকানদের জীবনকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। জিনিসপত্রের মূল্য যে এত দ্রুত ও এত বেশি বৃদ্ধি পাবে তা ফেডারেল রিজার্ভ ধারণা করতে পারেনি। করছে ভোগ্য পন্যের মূল্য বৃদ্ধি আরও কিছুদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্য এখন স্থিতাবস্থায় থাকলে আবারও বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পন্যমূল্যে আরেক দফা চাপ আসবে। সরকার আমেরিকানদের কোনো আশাবাদ শোনাতে পারছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে মুদ্রাস্ফীতির হার এখন যে স্তরে আছে, তা যে দ্রুততায় বেড়ে এই স্তরে পৌছেছে তা থেকে একই দ্রুততায় হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে এমন আশা করার কোনো কারণ নেই। এই হারে সামান্য রদবদল হলেও পন্য মূল্যের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে। যেমন গত জুন মাস পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির সারা বছরের গড় ছিল ৫.৯ শতাংশ এবং গত মে থেকে জুনের মধ্যে পরিবর্তন ছিল মাত্র ০.৭ শতাংশ এবং এটিও ছিল মুদ্রাস্ফীতির মাসিক হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য ফেডারেল রিজার্ভ বছরে দু’বার ০.২৫ শতাংশ হারে সূদ হার বৃদ্ধি করেছিল। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল তখন বলেছিলেন যে তারা পন্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখেন না। এখন সূদ হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, তবুও মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারছে না ফেডারেল সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলো। ফেডারেল সরকার এমন সংকটে পড়েছে যে তারা স্থির করতে পারছে না অর্থনীতির এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী। পাওয়েল স্বীকার করেন যে মুদ্রাস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌছে গেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পেরে ওঠার মতো ব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভের নেই, তারা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝতে অক্ষম। কারণ পাওয়েল গত বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যাকে সাময়িক ও সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যার সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেছিলেন। তখন থেকে মুদ্রাস্ফীতি তীব্র হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধ ও চীনে কোভিড ১৯ এর নতুন ধাক্কায় আবারও শাটডাউনের কারণে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত অধিকাংশ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জনগণ দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেনি এবং তারা মনে করছে যে ফেডারেল রিজার্ভ দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তাদের পক্ষে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা সম্ভব হবে না। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার এক বক্তৃতায় ভোগ্য মূল্য বৃদ্ধির খবর স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি জানি খাবারের দাম বেড়েছে। আমরা তা কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য কাজ করছি। গ্যাসের দাম কমানোর জন্য আমি আমার সকল শক্তি ও প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাবো। কিন্তু তার প্রচেষ্টায় পন্য মূল্য বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হয়নি, বরং দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের আর্থিক সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল পর্তুগালের সিনত্রায় এক অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন, “এখন আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছি যে, মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে আমরা কত কম জানি।” আমেরিকানরা যদি জীবনযাত্রার ব্যয় সমন্বয় ও মূল্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের বেতন ৬-৭ শতাংশ বৃদ্ধির দাবী জানায়, তাহলে কোম্পানিগুলো তাদের পন্য মূল্য বৃদ্ধি করবে, লোকবল হ্রাস করবে। তাতে মুদ্রাস্ফীতি বরং স্থায়ী রূপ নেবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশংকা করেন, যা ভোক্তাদের আরও নাজুক অবস্থার মধ্যে ফেলবে।