শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানল-দাবদাহে পুড়ছে বিশ্ব- জাতিসংঘ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানল-দাবদাহে পুড়ছে বিশ্ব- জাতিসংঘ
বিবিসি২৪নিউজ, এমডি জালালঃ বিশ্বে অস্বাভাবিক তাপে, দাবানল-দাবদাহে, গরমে পুড়ছে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার বিশাল অংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রুদ্ররূপ ধারণ করেছে বিশ্ব আবহাওয়া। দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে—ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, তুরস্ক, জার্মান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ওকলাহোমা, আরকানসাসসহ কয়েকটি শহরে। বহুদেশে তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়েছে।
সপ্তাহ জুড়ে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে উত্তর গোলার্ধের বড় অংশের লোকজন। কিছু কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শুষ্ক আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কবলে পড়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম, গ্রিস, সুইডেন, হল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের কিছু অংশ, ফ্রান্স, জার্মান, স্পেন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ।
এতদিন শীতপ্রধান শহর হিসেবে পরিচিত ছিল ফিনল্যান্ডের রোভানিইমি। তবে এবার রুদ্ররূপ ধারণ করেছে এখানকার তাপমাত্রা, পারদ চড়েছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। পশ্চিম ইউরোপে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। এএফপি জানায়, ফ্রান্সে দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার। ফ্রান্সের জিরোন্দে জঙ্গলে যে ভয়াবহ দাবানলের তাণ্ডব চলছে তা নিয়ন্ত্রণে আনা ফায়ার ফাইটারদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।
তাপপ্রবাহে পুড়ছে পশ্চিম ইউরোপ। স্পেন ও পর্তুগালে দাবানলের অনিয়ন্ত্রিত আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চরম তাপমাত্রার কারণে পতুর্গালের মূল ভূখণ্ডের প্রায় সবটাতেই রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। আইপিএমএ আবহাওয়া প্রতিষ্ঠান লিসবনে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। স্পেনের এই আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, এবারের তাপমাত্রা ২০২১ সালের আগস্টে গোটা স্পেনের তাপমাত্রার রেকর্ড ৪৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এএফপি জানায়, স্পেনে বিমান এবং হেলিকপ্টার নিয়ে শত শত দমকলকর্মী পূর্বাঞ্চলে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়ছে। দাবানলে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পুড়ে গেছে। পর্তুগালেও একই পরিস্থিতি। জার্মানির পূর্ব দিকের এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা পৌঁছেছে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেখানে শুরু হয়েছে দাবানলের তাণ্ডব। দাবানলের জন্য ২০টি গ্রামের বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপে রবিবারও দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছিল। যুক্তরাষ্ট্রে আগাম দাবানল দেখা যাচ্ছে।
জুলাইয়ের শুরুতেই উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অঞ্চলে আগুন লাগে। রাতারাতি তা দ্বিগুণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। খরা পর্যবেক্ষণ সংস্থার হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়ার ৮৬ শতাংশ খরায় ভুগছে। দাবানল বাড়তে থাকায় বিশ্বের সবেচেয়ে বড় গাছ জায়ান্ট সেকু্যইজের বন পুড়ে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কে আছে এই গাছের সবচেয়ে বড় বন। ইতিমধ্যেই পুড়ে গেছে ১ হাজার ৫৯১ হেক্টর বনাঞ্চল। ধোঁয়ার কারণে ঐ অঞ্চলের বাতাসে দূষণ বেড়েছে এবং পার্কের মনোরম দৃশ্য ঢাকা পড়েছে। গত ৭ জুলাই শুরু হয় এ দাবানল। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে মারিপোজা বনের অন্তত ৫০০ জায়ান্ট সেকু্যইজ। গাছগুলো প্রায় ৩ হাজার বছর বাঁচতে পারে।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে চীনের বাণিজ্যিক রাজধানী সাংহাইসহ ৮৬টি শহরে। দিন দিন তাপমাত্রা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে যে রাস্তায় ফাটল দেখা যাচ্ছে। এমনকি বাড়ির ছাদের টালিতেও ফাটল ধরতে দেখা গেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে চীনের বহুসংখ্যক মানুষ মাটির নিচের বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে। এই বাংকারগুলোতে আছে ওয়াই ফাই, মাইক্রো ওভেনের মতো সমস্ত রকম জরুরি পরিষেবা।
জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত দেশটির জনজীবন। জাপান টাইমসের খবরে বলা হচ্ছে—জাপানে গত এক সপ্তাহে ভয়াবহ দাবদাহের কারণে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। টোকিওর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইসিসাকিতে তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
ইন্টার প্রেস সার্ভিস জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে আগুন জ্বলছে। ইতিমধ্যে সমস্ত জলবায়ু সূচক রেকর্ড ভঙ্গ করে চলেছে, পুরো বিশ্ব জলবায়ুই বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন তাপপ্রবাহ হচ্ছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়ে তাপপ্রবাহ আরো তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
শিল্প যুগ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর আবহমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ সেলসিয়াস বেড়েছে। কার্বন নিঃসারণ কমানোর বড় উদ্যোগ না নিলে তাপমাত্রা আরো বাড়বে। এ বছর ফেব্রুয়ারির এক জাতিসংঘ প্রতিবেদন বলছে, মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন খরা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং আগামী ২৮ বছরে চরম দাবানলের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।