সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » কঠিন সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা
কঠিন সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা
বিবিসি২৪নিউজ,এশিয়া ডেস্কঃ মরিয়া জনতা দাবি পূরণ করে ছাড়ল, সহিংস বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি এল; কিন্তু রোববার ছুটির দিনের সকালে সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার ঘুম ভাঙল আরও অনিশ্চত, আরও নাজুক একটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে।
শনিবার দিনভর নজিরবিহীন বিক্ষোভ আর সহিংসতার পর রোববার রাজধানী কলম্বো ছিল শান্ত। তবে বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাসভবনের দখল ছাড়েনি। সরকারের এ দুই শীর্ষ ব্যক্তির পদত্যাগের ঘোষণার বাস্তবায়ন না দেখে তারা জায়গা ছাড়তে রাজি নয়।
প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে দিনভর বিক্ষোভকারীদের আনন্দ-আড্ডার ছবি এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। গোটাবায়ার প্রাসাদে তারা লাখ লাখ রুপি পেয়েছেন বলেও খবর এসেছে।
শনিবার রাজপথের বিক্ষোভ থেকে হাজারো জনতা স্রোতের মত ওই প্রাসাদে ঢুকে পড়ে। পরে তারা প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেয়। তারা কেউ সে সময় বাসায় ছিলেন না। তারা এখন কোথায়, সেটাও গোপন রাখা হয়েছে, যদিও প্রেসিডেন্ট দুদিন আগেই পালিয়েছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।
তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে শনিবারই স্পিকারের মাধ্যমে জানিয়েছেন, বুধবার তিনি পদত্যাগ করবেন। আর তার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহেও বলেছেন, তিনি সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত।
সিএনএন লিখেছে, গোটাবায়ায় এবং ওই ঘোষণা জনতা উদযাপন করেছে রাজপথে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে। কিন্তু তাতে করে এক ধরনের নেতৃত্ব সংকটেও পড়তে যাচ্ছে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকা শ্রীলঙ্কা।
ঝড়ের পর শান্ত কলম্বো
গোটাবায়ার প্রাসাদে বিক্ষোভকারীরা পেলেন লাখ লাখ রুপি
আগে পদত্যাগ, তারপর নেতাদের বাড়ি ছাড়বে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা
গোটাবায়ার বাসভবনে আনন্দে-আড্ডায় বিক্ষোভকারীরা
এ সপ্তাহের শেষ দুই দিনে আরও চারজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে শনিবার পদত্যাগ করেন পর্যটন ও ভূমিমন্ত্রী হারিন ফারনান্দো, শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী মানুশা নানাইক্কারা ও পরিবহন ও মহাসড়কমন্ত্রী এবং বর্তমান মন্ত্রিসভার সহমুখপাত্র বান্দুলা গুনাবর্ধনে। রোববার পদত্যাগ করেছেন বিনিয়োগ উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী ধাম্মিকা পেরেরা।
গোটাবায়ার পদত্যাগের ঘোষণা বিরোধীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক জয়, যারা দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করে তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলস্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে দেশটি। এক সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটিতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। জ্বালানি তেল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মারা যান কয়েকজন। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত।
এর প্রতিবাদে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক মাসের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পর শনিবার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে তার পদত্যাগের দাবি জানায় বিক্ষোভকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত শ্রীলঙ্কার টেলিভিশনের ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, লাখো বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বেষ্টনী গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে তার অফিস ও কার্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি ভবনের ব্যালকনি থেকে নিজেদের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়।
সামনে কী
সিএনএন লিখেছে, শনিবারের বিক্ষোভের ফল হয়তো রাজাপাকসে পরিবারের রাজনৈতিক প্রতিপত্তির অবসানের সূচনা করেছে, যারা গত দুই দশক ধরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্ষমতায় ছিল।
শনিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে জানান, ‘ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের জন্য’ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোটাবায়া।
তবে ক্ষমতার এই হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শ্রীলঙ্কাকে একটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে।
প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী - দুজনেই পদত্যাগ করলে শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার সেদেশে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ ৩০ দিন দেশ পরিচালনা করতে পারবেন।
এর মধ্যেই পার্লামেন্টকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে, যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদের শেষ দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশনস কমিটি এক টুইটে বলেছে, গোটাবায়া রাজাপাকসে তার জনগণের ‘আস্থা হারিয়েছেন’।
“এখন, সেদেশের সব দলকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় একটি নতুন সরকার গঠনের জন্য একত্রে কাজ করতে হবে, যে সরকার শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানাবে এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখবে।”
টুইটে বলা হয়, সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে অবশ্যই সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে এবং এ পরিস্থিতিতে সংকট সৃষ্টি নয় বরং সমাধানের অংশীদার হতে হবে।সাংবাদিক আহত
ন্যাশনাল হসপিটাল অব শ্রীলঙ্কার চিকিৎসক ড. পুষ্পা জয়সা জানান, শনিবারের বিক্ষোভে অন্তত ৫৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধও রয়েছেন। আহতদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার পূর্বাংশের একজন আইনপ্রণেতাও রয়েছেন।
দেশটির একটি টেলিভিশন স্টেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবারের বিক্ষোভে আন্দোলনকারী ও পুলিশের আক্রমণে ৬ জন সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন।
অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কা: অবশেষে গদি ছাড়তে ‘রাজি’ গোটাবায়া রাজাপাকসে
আগে পদত্যাগ, তারপর নেতাদের বাড়ি ছাড়বে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা
পদত্যাগ করতে ‘প্রস্তুত’ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট
দুই জন সংবাদকর্মী শ্রীলঙ্কার টেলিভিশন চ্যানেল নিউজফার্স্টের কর্মী। ওই টিভি থেকে সম্প্রচারিত ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে ধাক্কাধাক্কি চলার এক পর্যায়ে পুলিশ ওই দুই সাংবাদিককে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। সহকর্মী যে সাংবাদিকেরা তাদের উদ্ধারে এগিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে নিউজফার্স্ট।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ মহাপরিদর্শক সি ডি বিক্রমাসিংহে জানান, ওই হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের ‘তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত’ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহেও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা ফ্রি মিডিয়া মুভমেন্ট সাংবাদিকদের ওপর এই পুলিশি হামলার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।