মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বন্যা নিয়ে ভয়ের কিছু নাই, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলছে- প্রধানমন্ত্রী
বন্যা নিয়ে ভয়ের কিছু নাই, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলছে- প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেটঃ দেশে বন্যা আসাটা আমার মনে হয় ঘাবড়ানোর কিছু নাই৷ বাংলাদেশের মানুষকে সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হবে৷ অবকাঠামোগুলোও সেভাবে তৈরি করতে হবে৷’’ বন্যা পরিস্থিতি দেখার পরে সিলেটে নানা দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী ৷
মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টারে করে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর সিলেট সার্কিট হাউজে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বন্যা মোকাবেলায় এরকম প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি৷দেশের মানুষকে সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হয়েছে এবং হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামোগুলো তৈরি করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিলেট অঞ্চলে মাটি উঁচু করে আর কোনো রাস্তা করা হবে না, ‘এলিভেটেড’ রাস্তা হবে৷ এলিভেটেড রাস্তা হলে সেটা সহজে নষ্ট হয় না, বন্যার মত দুর্যোগে যাতায়াতেরও সুবিধা হয়৷
পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করলে হবে না৷ তারপর নিয়মিত মেনটেইন্যান্সন্স ড্রেজিং করতে হবে৷’’
ছোট বেলায় সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিশাল বিশাল ড্রেন ছিল, সব বাড়ির সামনে পানি যাওয়ার ড্রেন ছিল, তারওপর স্ল্যাব দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা৷ দুর্ভাগ্য, এখন কিন্তু নাই৷ বিল্ডিং বানিয়ে এমন অবস্থা… পানি যাওয়ার জায়গা নাই৷ পানি যাওয়ার জায়গা তো লাগবে৷’’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সে সময় যারা তৈরি করেছিলেন, প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই করেছেন৷ কিন্তু এখন আমাদের সময়ে যারা করছেন, তারা হয়ত চিন্তা ভাবনা করছেন না৷”
বন্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই কাজ করেছে৷ অনেক জায়গায় কেউ যখন পৌঁছাতে পারেনি আমাদের নেতারা সেখানে পৌঁছেছে, আমার কাছে ছবি তুলে পাঠিয়েছে৷
‘‘আমি সাথে সাথে সেই ছবি সেনাপ্রধানকে পাঠিয়েছি, আমার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি৷ যেখানে সেনাবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে সেনাবাহহিনী বা যেখানে বিমানবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে তাদেরকে পাঠিয়েছে। যারা আমার কাছে ছবি পাঠিয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা, তাদেরকে ধন্যবাদ৷ কারণ তা না হলে রিলিফের কাজটা অত সহজে করা যেত না৷’’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারে থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক, যে কোনো দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়।৷আওয়ামী লীগ সবার আগে দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়৷ এবারের বন্যায় যুবলীগের এককর্মী সবাইকে সতর্ক করে একটা ঘরে যাওয়ার পর সেখানে পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে৷’’
বন্যার মত প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে পুরোনো দিনের সরঞ্জামের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্যার সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সেজন্য সব সময় একটা বিকল্প ব্যবস্থা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে রাখতে হয়৷ আমরা হারিকেনেরে কথা, নৌকার কথা ভুলে গেছি, তোলা চুলার কথা ভুলে গেছি৷ বোধ হয় এগুলো এখন আবার নতুন করে ভাবতে হবে৷’’
সিলেট অঞ্চলের কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পানি যাবে দেশের মধ্যাঞ্চলে, তারপর বন্যা পৌঁছাবে দক্ষিণাঞ্চলে, বাংলাদেশে এরকমই হয়৷
এবারের বন্যা নিয়ে আগে থেকেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি একমাস দেড়মাস আগে থেকেই সবাইকে বলতাম, এবার বড় বন্যা আসবে, সবাই প্রস্তুত থাকেন৷
‘‘প্রকৃতির অবস্থা দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায়৷ সে কারণে আমি বলেছি বড় বন্যা আসবে৷ বাংলাদেশে ১০/১২ বছরের মধ্যে একেকটা বড় বন্যা আসে৷ আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার৷’’
চলতি মৌসুমে সিলেটে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত বন্যায় প্লাবিত হল৷ এরপরও যে আরও বন্যা হতে পারে, সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘খাদ্যমন্ত্রীকে অনেক আগে থেকেই বলছিলাম এবার বন্যা আসবে, প্রস্তুত থাকেন৷ চারদিকে দেয়াল দিয়ে খাদ্য গুদাম ও সারের গুদাম রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম৷
‘‘এ ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ সব সময় করতে হবে৷ আগামীতে পূর্ণিমার সময় কী অবস্থা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় করে যাচ্ছি৷ যখন পানি নেমে যাবে, সেই সাথে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে৷ সাথে সাথে ময়লাগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে৷ আমাদের নেতাকর্মীদেরও এই কাজে যুক্ত হতে হবে৷ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন তৈরি করে রাখতে হবে৷’’
উদ্ধারকাজ ও ত্রাণকাজে যুক্তদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিজেরা আপনারা কাজ করছেন, আপনাদেরকেও সাবধানে থাকতে হবে৷ এখন হয়ত কাজের ভেতরে আছেন, পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না৷ বার বার বৃষ্টির পানিতে ভিজেছেন৷ পরে সতর্ক থাকতে হবে।’’
বন্যা কেটে গেলে প্রয়োজনে ধানের বীজ ও মাছের পোনা দেওয়ার প্রস্তুতি সরকারের আছে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী৷ পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশুদ্ধ পানির জন্য বৃষ্টির পানি কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা