সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » জেলার খবর | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » সুনামগঞ্জ-রৌমারীতে পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ
সুনামগঞ্জ-রৌমারীতে পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রনিধিঃ সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে দ্বিতীয় দফায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ সোমবার (১৩ জুন) সকাল ৯টার দিকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
জানা গেছে, তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষজনের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের বালিজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘গত দুই দিনের বৃষ্টিপাতে হাওরসহ সবজায়গায় পানি বেড়েছে। আজ সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি অফিসসহ সবক্লাস রুমে হাটু পানি। শিক্ষার্থীরা পানির ভেতরে ক্লাস করতে পারবে না। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছি।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় খাসিয়ামারা নদীর পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত করেছে। পানির কারণে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের নিচু এলাকা নোয়াগাঁও, রণভূমিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এই মুহূর্তে তাদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।’তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানি ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলার আনোয়াপুরবাজার এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়েছে। গত বন্যায় হাওরে পানিতে ভরপুর থাকায় আজকে ঢলের পানি এসেই মানুষের ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষদের শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ (সোমবার) সকাল ৯ টায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপুর ১২ টায় সুরমা নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায়। মেঘালয়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে এই উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পনিবন্দি রয়েছেন।
এদিকে শাক-সবজি, মরিচ, কাউন, তিল, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এছাড়া কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর গ্রামের বন্যা কবলিত আমেনা বেগম বলেন, ‘তিনদিন ধরে ঘরের ভেতরে পানি। রান্না করতে পারছি না। শুকনা খাবার যা ছিলো তা শেষের দিকে। পানির কারণে পুরো পরিবার সমস্যায় রয়েছে। পালিত গরু ছাগল নিয়েও বিপাকে পড়েছি আমরা।’
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক সুজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চরাঞ্চলে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বন্যার পানিতে ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে।’
এছাড়া এই উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীরাও।
উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্ল্যা জানান, ‘রৌমারী উপজেলার সব গুলো ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিতদের সাহায্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘জরুরী ভিত্তিতে বন্যা কবলিতদের জন্য ৩ লাখ টাকার শুকনো খাবার সরবরাহের কাজ চলছে। আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জিঞ্জিরাম, ধরনী ও কালজানি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রৌমারী উপজেলায় প্রবেশ করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পনি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপদসীমার নিচ রয়েছে।’