বুধবার, ৮ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » জার্মান সেনাবাহিনীকে দ্রুত আধুনিকায়নে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছে -সরকার
জার্মান সেনাবাহিনীকে দ্রুত আধুনিকায়নে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছে -সরকার
বিবিসি২৪নিউজ,ইইউ প্রতিনিধিঃ ইউক্রেন যুদ্ধ জার্মান সেনাবাহিনীকে বাস্তবতার কঠিন জমিনে আছড়ে ফেলেছে৷ সরকার অনুধাবন করেছে সেকেলে অস্ত্র আর সরঞ্জাম নিয়ে জার্মানির মতো দেশের সেনাবাহিনী চলতে পারে না৷ চাই দ্রুত আধুনিকায়ন৷ কিন্তু দ্রুত কি আদৌ সম্ভব?
দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত এবং পুরোনো সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করছে জার্মানির সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌ-বাহিনী৷ বড় কোনো অভিযানে যাওয়ার উপযোগী ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, বডি আর্মার, ব্যাকপ্যাক, এমনকি রাতের গভীরে নিরাপদে চলাফেরার জন্য ভালো নাইট-ভিশন গিয়ারও নেই তাদের৷ একটা সময় পর্যন্ত শীতে পরার উপযোগী অন্তর্বাসটা অন্তত পর্যাপ্ত ছিল৷ ইস্টার্ন ফ্রন্টে ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার সময় দেখা গেল অন্তর্বাসও প্রায় শেষ!
এ অবস্থা থেকে জার্মানির সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী করে তোলার জন্যই ১০০ বিলিয়ন ইউরোর বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার৷ তহবিল গড়তে ঋণ করতে হচ্ছে ৷ তাতে অবশ্য ওলাফ শলৎসের সরকারের কোনো আপত্তি নেই৷ সেনাবাহিনীর আধুকায়ন হবে- সরকারের কাছে এ মুহূর্তে এটাই আসল কথা৷
কিন্তু তহবিল ঘোষণা করলেই কি আধুনিকায়ন দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব? দ্রুত না হলে কি যখন হবে তখন আর সদ্য পাওয়া সামরিক সঞ্জামে সজ্জিত সেনাবাহিনীকে আধুনিক বলা যাবে? জার্মান সেনাবাহিনীর যে কোনো পণ্য কেনার প্রক্রিয়া এত মন্থর যে, বিশেষজ্ঞদের মনে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়েও দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে৷ আশঙ্কাটা অমূলকও নয়, কারণ, অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই কালক্ষেপন মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷
সেনাবাহিনীর যে কোনো পণ্য ক্রয়ের বিষয়টি দেখভাল করে দ্য ফেডারেল অফিস অব বুন্ডেসভের ইকুইপমেন্ট, ইনফর্মেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইন-সার্ভিস সাপোর্ট (বিএআইএনবিডাব্লিউ)৷ তাদের প্রধান কার্যায় জার্মানির কোবলেনৎ্স শহরে৷ সেখানে কাজ করেন অন্তত সাড়ে ছয় হাজার কর্মী৷ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা ১১৬টি কার্যালয় মিলিয়ে মোট কর্মী অন্তত ১১ হাজর জন৷ কিন্তু এত অফিস, এত কর্মী সেনাবাহিনীর ক্রয় কার্যালয়কে যে খুব সক্রিয় করেছে তা কিন্তু নয়৷ বরং তাদের কাজ এত মন্থর যে অনেক ক্ষেত্রেই তা লোক হাসাচ্ছে৷১০ বছরেও কেনা যায় না হেলমেট!
বিএআইএনবিডাব্লিউ-এর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সামান্য একটা কাজে অসামান্য বিলম্বের সাক্ষী হয়ে আছে সেনাবাহিনীর প্যারাশুটিস্টরা৷ তাদের জন্য হেলমেট কেনার চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছিল ১০ বছর আগে৷ সেই হেলমেট এখনো কেনা হয়নি৷ বুন্ডেসটাগের সংসদীয় কমিশনার ইফা হ্যোগল জানিয়েছেন, বিএআইএনবিডাব্লিউ নাকি কোন হেলমেট কিনবে সেটা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছে, কিন্তু ‘জার্মান স্ট্যান্ডার্ডের’ হেলমেট বেছে নিতে গিয়েই দেখা দিয়েছে সমস্যা৷ বিএআইএনবিডাব্লিউ ঠিক করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্যরা যে হেলমেট পরে সেটাই কেনা হবে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেই হেলমেট জার্মানির আবহাওয়ায় ব্যবহার করা কতটা ভালো হবে তা বুঝতে পারছেন না বলে ১০ বছরেও কেনা হয়নি হেলমেট৷
৩০ বছরের পুরোনো রেডিও ইকুইপমেন্ট!
ইফা হ্যোগল ট্যাঙ্ক ব্যাটালিয়নের সদস্যদেরও দীর্ঘদিনের একটা আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, ট্যাঙ্ক ব্যাটালিয়ন যে রেডিও ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করছে তা ৩০ বছর আগের৷ অনেক বছর ধরেই নতুন ইকুইপমেন্ট কেনার কথা ভাবা হচ্ছে, কিন্তু ভাবনা অনুযায়ী কাজ আর হচ্ছে না৷.
সাত বছর ধরে ভালো অ্যাসল্ট রাইফেলের অপেক্ষা
জার্মানির সেনা সদস্যদের জি৩৬ অ্যাসল্ট রাইফেলটি একটুতেই খুব গরম হয়ে যায়৷ ২০১৫ সালে প্রথম ধরা পড়ে এই সমস্যা৷ জার্মানির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন নতুন অ্যাসল্ট রাইফেল কেনার উদ্যোগ নেন৷ কিন্তুএখনো তা কেনা হয়নি৷
‘আমলাতন্ত্র দানবের মতো’
সেনাবাহিনী যে এখনো মান্ধাতার আমলের সরঞ্জাম এবং অস্ত্র ব্যবহার করছে তার জন্য কি আমলাতন্ত্রই মূলত দায়ী? গবেষক জাওয়ার নিঃসঙ্কোচে বললেন, ‘‘তা তো অবশ্যই, বিশেষ করে জার্মানির প্রতিরক্ষা আমলাতন্ত্র তো চূড়ান্ত রকমের দানবীয়৷”
অবস্থা পরিবর্তনে জরুরি উদ্যোগ
১০০ বিলিয়ন ইউরোর আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম ক্রয়কে ত্বরান্বিত করতে সম্প্রতি একাধিক জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির সংসদ৷ নতুন নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জরুরি প্রয়োজনের পণ্যগুলো এখন থেকে সরাসরি কেনা যাবে৷ বিশেষ করে যেসব পণ্যের দাম ১০০০ ইউরোর কম, সেগুলো এখন থেকে সরাসরিই কেনা হবে৷