শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ভারতে বৈধ বাংলাদেশিদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে দিল্লিতে
ভারতে বৈধ বাংলাদেশিদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে দিল্লিতে
বিবিসি২৪নিউজ,অমিত ঘোষ, দিল্লি থেকেঃ ভারতের হিন্দুত্ববাদী একটি ফেসবুক পেজ থেকে এমন কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে বৈধভাবে দিল্লিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছে।
ওই সব ভিডিওগুলি মোট প্রায় এক কোটি আশি লক্ষ মানুষ দেখেছেন আর বিজেপি নেতারাসহ বহু হিন্দুত্ববাদী ফেসবুক পেজ বা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে সেগুলো শেয়ার করা হয়েছে।
ভারতে ভুয়া খবর খুঁজে বার করার ওয়েবসাইট অল্ট নিউজ খুঁজে বার করেছে ওই সব কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কয়েকজনকে আর তারা যে বৈধ উপায়ে ভারতে বেড়াতে বা অন্য কাজে দিল্লিতে গিয়েছিলেন, সেই প্রমাণও বার করে এনেছে অল্ট নিউজ।
‘বর্তমান ভারত’ নামের একটি ফেসবুক পেজে আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি সাংবাদিকের মতো মাইক হাতে দিল্লির শাহিনবাগ এলাকায় মুসলমান দেখলেই জানতে চাইছেন যে তিনি কোথা থেকে এসেছেন।কীভাবে ভারতে এসেছেন? বিমানে না কাঁটাতার পেরিয়ে না জলপথে?’
প্রায় চার মিনিটের এরকম একটি ভিডিওতে প্রায় ৩০জনকে দেখানো হয়েছে, যারা প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে তারা বাংলাদেশি। তারা যে জুম্মার নামাজ পড়ে ফিরছেন, সেটাও জানিয়েছেন ওই বাংলাদেশিরা। তবে অনেকেই যে হিন্দিতে করা প্রশ্ন ঠিকমতো বুঝতে না পেরেই কোনওমতে জবাব দিচ্ছেন, সেটাও স্পষ্ট।
শুধু কোথা থেকে এসেছেন, সেটা জিজ্ঞাসা করেই ক্ষান্ত থাকেননি ওই ফেসবুক ভিডিওটির নির্মাতা। তিনি তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন - “কীভাবে ভারতে এসেছেন? বিমানে না কাঁটাতার পেরিয়ে না জলপথে?”
কেউ যখন জবাব দিয়েছেন তারা আসলে মল্টার দূতাবাসে ভিসা নিতে এসেছেন, সেই জবাব এড়িয়ে গেছেন ওই ভিডিও নির্মাতা।
কাউকে আবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে পয়সা, অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে ভারতে এসেছেন কি না। হিন্দি ঠিকমতো না বুঝে এক বাংলাদেশি জবাব দিয়েছেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভিসার জন্য এসেছি।” অর্থাৎ পয়সা (হিন্দিতে পইসা) কথাটাকে ওই বাংলাদেশি শুনেছেন ভিসা। কারণ ভিডিওতে এরপর তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “হ্যাঁ হ্যাঁ - ভিসা!”
অনেকেই বলেছেন যে ভিসার কাজ মিটে গেলে তারা বাংলাদেশে ফিরে যাবেন।
দুদিন ধরে এই সব ভিডিওগুলি আপলোড করার পরের দিন একটা দীর্ঘ ফেসবুক লাইভ হয়েছে ওই পেজ থেকে।অল্ট নিউজের অনুসন্ধান
এই ভিডিয়ো ব্যাপক ভাবে শেয়ার হতে দেখে সেটি নজরে আসে ভুয়া খবর ধরার ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের।
তারা যোগাযোগ করে এক স্থানীয় সাংবাদিক আরবাব আলির সঙ্গে।
মি. আলি জানিয়েছেন যেসব বাংলাদেশির চেহারা দেখানো হয়েছিল, তাদের তিনি কীভাবে খুঁজে বার করেছিলেন।
“ভিডিওগুলি থেকে ৩০টিরও বেশি চেহারার স্ক্রিনশট নিয়ে আমি শাহিনবাগের বিভিন্ন মসজিদে ঘুরি। ইমাম, মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে কথা বলি। এরকম চারটি মসজিদে ঘোরার পরে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি যে এই ব্যক্তিরা জুম্মার নামাজ পড়তে আসেন ঠিকই, কিন্তু প্রায় দু কিলোমিটার দূরের একটি এলাকায় থাকেন,” জানাচ্ছিলেন মি. আলি।
সেখানে গিয়ে এমন কয়েকজন বাংলাদেশিকে খুঁজে পান আরবাব আলি, যাদের ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল।
তিনি জানান, “প্রথমে ওই বাংলাদেশি নাগরিকরা তো কথাই বলতে চাননি - কারণ ততক্ষণে তারাও আগের ভিডিওটি দেখে ফেলেছিলেন এবং সেখানে যে তাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটাও তারা জেনে গিয়েছিলেন।”কয়েকজন বাংলাদেশির সাক্ষাতকার রেকর্ড করে আরবাব আলি বুঝতে পারেন যে কোনও প্রেক্ষিত না বলেই তাদের কাছে ওই ভিডিও নির্মাতা শুধু জানতে চেয়েছিলেন যে তারা কোথা থেকে এসেছেন।
ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে মি. আলি জানতে পারেন যে এদের একটা বড় অংশই এসেছেন মল্টায় যাওয়ার ভিসা নিতে।
বাংলাদেশে মল্টার কোনও দূতাবাস নেই, তাই বাংলাদেশিদের দিল্লিতে এসে মল্টার ভিসা নিতে হয়। আর ভারতেও তারা যে বৈধ ভিসা নিয়েই এসেছেন, সেই প্রমাণও দেখেছেন সাংবাদিক আরবাব আলি।
তাকে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক জানিয়েছেন যে ”কাঁটাতারের বেড়ার নিচ দিয়ে না ওপর দিয়ে কীভাবে এসেছেন ভারতে?” - এই প্রশ্নে খুবই অপমানিত হয়েছেন তারা।
কেউ লিখেছেন এদের ১০ থেকে ১৫ বছর জেলের সাজা হওয়া উচিত, কেউ এদের রোহিঙ্গা বলে উল্লেখ করেছেন বা কেউ লিখেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এদের থাকতে দিচ্ছেন।