শুক্রবার, ৬ মে ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » আমদানিকারকরা বাজারে সংকট তৈরি করে বাড়িয়েছে সয়াবিন তেলের দাম
আমদানিকারকরা বাজারে সংকট তৈরি করে বাড়িয়েছে সয়াবিন তেলের দাম
বিবিসি২৪নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ আমদানিকারকরা ক্রেতাদের রীতিমতো জিম্মি করে সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ দাম বাড়ানোর পরও কিন্তু বাজারে তেল মিলছে না! তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিলেও এখন যে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তা দুই তিন-চার মাস আগে আমদানি করা৷ এখন যে দাম সেই দামের তেল বাংলাদেশে আসতে আরো তিন-চার মাস লাগবে৷ এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিটি গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন৷
বাংলাদেশে ভোজ্য তেল, বিশেষ করে সয়াবিন আমাদনি করে ছয়-সাত জন আমদানিকারক৷ ফলে পুরো ব্যবসা তাদের নিয়ন্ত্রণে৷ পুরান ঢাকার মৌলভী বাজারের সয়াবিন তেলের ডিলার (পাইকারি বিক্রেতা) গোলাম মাওলা বলেন, ‘‘রোজার মাঝামাঝি থেকেই আমদানিকারকরা মিল থেকে সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়৷ তখন থেকেই খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হয়৷ আমার জানা মতে, দেশে তেলের পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও তারা দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিতে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়৷ এখন দাম বাড়ানোর পরও সরবরাহ শুরু হয়নি৷ দুই-একদিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে তারা জানিয়েছেন৷’’
কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণেই ১৬০ টাকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ২২০ টাকায়ও বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ আর এখন ১৯৮ টাকা লিটার বেঁধে দিলেও বাজারে সরবরাহ শুরু না হওয়ায় তেল পাওয়া যাচ্ছে না৷ পাওয়া গেলেও ২২০ টাকার নীচে এক লিটার সয়াবিন তেল কেনা যাচ্ছে না৷ কলাবাগানের খুচরা বিক্রেতা এফএনএফ শপের মিন্টু মিয়া বলেন, ‘‘১৫ দিন ধরে আমার দোকানে সয়াবিন তেল নেই৷ আমি বিক্রি করছি না৷ যাদের কাছে আছে, তারা ২২০ টাকার নীচে বিক্রি করছেন না৷’’
এখন বাজারে ভোজ্য তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রতি টনের আমদানিমূল্য ফ্রেইট চার্জসহ দুই হাজার ১০০ ডলার হিসেবে৷ কিন্তু ইনডেক্স মুন্ডি জানাচ্ছে, আজও ( শুক্রবার) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ক্রুড সয়াবিন তেলের দাম এক হাজার ৯০৭ ডলার৷ আর বাংলাদেশে এখন যে তেল আছে, তা বছরের প্রথম দিকে ফেব্রুয়ারি মাসে এলসি খুলে আমদানি করা হয় বলে জানা গেছে৷ তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টনের দাম ছিল এক হাজার ৬০০ ডলার৷
ভোজ্য তেলে প্রতি লিটারের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১৭২ টাকা৷ বোতলের সয়াবিন তেল লিটারে বেড়েছে ৩৮ টাকা, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷
গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছে৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ ৫০ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত সয়াবিন তেলের মজুত আছে৷
আমদানিকারকরা একই কথা বলছেন৷ সয়াবিন তেলের ৯৪ ভাগই আনা হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে৷ এই তেল প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়৷ এদিকে রোজার আগে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৩০ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়৷
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর এসএম নাজের হোসেন মনে করেন, ‘‘কয়েকজন ভোজ্য তেল আমাদানিকারকদের হাতে ভোক্তারা জিম্মি হয়ে আছে৷ তারা সরকারকে চাপ দিয়ে তেলের দাম বাড়িয়ে নিয়েছে৷ বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা এই কাজ করেছে৷ এখন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপরও পড়বে৷
’’তিনি বলেন, ‘‘তারা কেনা দাম এক হাজার ৮০০ ডলার ধরেছে৷ কিন্তু এই তেল যখন আমদানি করা হয় তখন এক হাজার ৫০০ ডলার দাম ছিল৷ ফলে দাম নির্ধারণে ফাঁকি আছে৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের সহায়তায় তারা এই কাজ করেছে৷ আবার যখন দাম কমবে, তখন তারা বলবে, আমরা তো বেশি দামে আমদানি করেছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘বাজারে মজুত আছে পর্যাপ্ত৷ আজকেও (শুক্রবার) চট্টগ্রাম বন্দরে এক হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল খালাস করা হয়েছে৷’’
সিটি গ্রুপের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার বিশ্বজিৎ সাহা বাজারে এখনো সয়াবিন তেলের সংকট নিয়ে খুচরা বিক্রেতা ও ডিলারদের দায়ী করেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘তাদের কাছে তেল আছে তারা স্টক করে রেখেছে৷ আর দেশে সয়াবিন তেলের মজুতও পর্যাপ্ত আছে৷’’
আবার তিনিই বলেন, ‘‘ঈদ গেল তো দুই-এক দিনের মধ্যে সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে৷ আমরা সরবরাহ নিশ্চিত করবো৷’’
কিন্তু ডিলাররা অভিযোগ করেন, ‘‘আমদানিকারকরা দাম বাড়ানোর জন্য রোজা থেকেই সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে৷ এখন দাম বেড়েছে৷ দুই-একদিনের মধ্যে সরবরাহ পাওয়া যাবে৷ আমরা তো কমিশন এজেন্ট৷ স্টক করে আমাদের কী লাভ? আমরা তো নির্ধারিত হারে কমিশন পাই৷’’
বিশ্বজিৎ সাহা দাবি করেন, ‘‘তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখেই তেলের দাম বাড়িয়েছেন৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন অনুমোদন করেছে৷ এখানে কোনো কারসাজি নেই৷’’
আগে দাম কম ছিল সেই তেলের ওপর এখন কেন দাম বাড়ানো হবে জানতে চাইলে তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন৷ এবং জবাব না দিয়েই টেলিফোন লাইন কেটে দেন৷