বৃহস্পতিবার, ৫ মে ২০২২
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন | স্বাস্থ্যকথা » ঈদের ছুটিতে বিনা চিকিৎসায় ১৩ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
ঈদের ছুটিতে বিনা চিকিৎসায় ১৩ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
বিবিসি২৪নিউজ, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেশে ঈদ ও এর পরদিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় বিনা চিকিৎসায় ১৩ রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, এই দুই দিনে কোনও চিকিৎসক ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের দেখতে আসেননি এবং ব্যবস্থাপত্রও দেননি। নার্স আর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ২/১ বার এলেও তারা রোগীদের স্যালাইন ও কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। এক রোগীর স্বজন বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার বিষয়টি পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
ঈদের দিন মঙ্গলবার (৩ মে) বিকালে ও বুধবার দুপুরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন, কিডনি, গাইনি ও শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছেন মেডিসিন ওয়ার্ডে। ভর্তি থাকা রোগী ও স্বজনদের আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ২/১ জন ছাড়া আর কেউ গত তিন দিন হাসপাতালে আসেননি। তাদের চেম্বারেও তালা দেখা গেছে। মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান এই দুই দিন তার ওয়ার্ডে আসেননি বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তালা দেখা গেছে চেম্বারে। ওয়ার্ডগুলোতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এলেও অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার কোনও চিকিৎসক আসেননি।
হাসপাতালের সহকারী ওয়ার্ড মাস্টার সালাম ১৩ জন মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও বিনা চিকিৎসায় কোনও রোগী মারা যাননি বলে দাবি করেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে।হাসপাতালে ঈদের দিন রাতে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সার্ভেয়ার জুয়েল মিয়া। তার বাড়ি রংপুর নগরীর চব্বিশ হাজারী কদমতলা এলাকায়। তার ছোট ভাই শিমুলের অভিযোগ, ঈদের দিন রাতে ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে কোনও চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি ও দেওয়া হয়নি কোনও ব্যবস্থাপত্র। পরদিন সকালে তার ভাই বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
তিনি দাবি করেন, ‘হাসপাতালের ডাক্তাররা মানুষ না কসাই? যদি রোগীর চিকিৎসা না হয় তাহলে কী করার আছে? ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
ঈদের পর দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পূর্ব দেবু গ্রামের আব্দুল মালেক (৫০) বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মা-সন্তানের কান্নায় হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তার মা দাবি করেন, ঈদের দিন রাতে তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অভিযোগ
ঈদের আগে থেকে পেটের ব্যথা নিয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি আছেন নীলফামারীর নীলসাগর এলাকার জুয়েল। তিনি দাবি করেন, ঈদের দিন থেকে কোনও ডাক্তার আসেননি। নার্স ও আয়া এসেছে দুইবার। হাসপাতাল থেকে কোনও ওষুধ দেওয়া হয়নি। ছাগল বিক্রি করে তিন হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনে এনে চিকিৎসা করছেন।
ভর্তি থাকা মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি এলাকার স্বাধীনের অভিযোগও একই। শামসুল আলম নামে আরেক রোগী ভর্তি আছেন সাত দিন ধরে। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারীতে। তিনি জানান, কোনও ডাক্তার দেখতে আসেননি। প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকে স্যালাইনও দেয় না।
রংপুরের পীরগাছা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রানার অভিযোগ একই। মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থীর মা বললেন, ‘এখানে কোনও চিকিৎসা নেই। সিলিং ফ্যান ঘোরে না। সে কারণে একটি ছোট ফ্যান কিনে এনে গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছি।’ এমন অভিযোগ হাসপাতালে ভর্তি থাকা আরও রোগী ও স্বজনদের।
কিডনি ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা কম হলেও কোনও চিকিৎসক নেই। তবে টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড বয় ও নার্সরাই রোগীদের ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রোগীদের।নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে তালা ঝুলছে। সেখানকার রোগীদের ঈদের আগে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। প্যাথলজি বিভাগেও তালা। ঈদের আগে থেকে সব প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে বলে জানালেন সেখানে কর্মরত কর্মচারী সাখাওয়াত হোসেন। গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়েও শুনতে হলো অভিযোগ। তারা বললেন, তিন দিন ধরে ডাক্তারের দেখা নেই।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম কাছে দাবি করেন, ছুটি থাকায় ঈদের সময় একটু সমস্যা হয়। তবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় ঠিকমতো। তবে বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা গেছে বলে অভিযোগ পাননি তিনি।
১৩ জন বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয় বলে দাবি করে বলেন, ‘এমনিতেই হাসপাতালে প্রতিদিন বেশ কয়েকজন রোগী মারা যায়। এসব স্বাভাবিক মৃত্যু।’